এমএলএমের আদলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ব্যবসার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মাট, ধামাকাসহ অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা। অনলাইন কেনাকাটা। প্রতারণা নাকি আস্থার জায়গা- এমন প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের কার্যক্রমের ধরন অনেকটাই এমএলএম কোম্পানির মতো। এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতারণার চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, কোম্পানিগুলো তা-ই করেছে। এমন অবস্থার জন্য দায়ী কে? আইনের কার্যকারিতা না থাকায় অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা চলছে দেশে। এতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ই-কমার্স বাজারের আকার বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার ক্রেতা অনলাইনে পণ্যের অর্ডার দেন। ১৩ থেকে ১৫ লাখ মানুষ বছরে একবার হলেও অনলাইনে অর্ডার করেন। অর্থাৎ বার্ষিক লেনদেন এখন ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের বছর এটি হবে ১৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। অনলাইন লেনদেনে গ্রাহকদের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এ খাতের উদ্যোক্তা। এই খবরটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে অগ্রগতির পাশাপাশি প্রতারণার মাত্রাও কম নয়। এর আগে ডেসটিনি, যুবকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণার কথা সবাই অবগত। কোম্পানিগুলো হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এমনকি অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রণয়নের ৮ বছর পরও ‘মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ কার্যকর না হওয়া দুঃখজনক। ডেসটিনি গ্রুপের অনিয়ম-দুর্নীতি ও প্রতারণার ফাঁদ ধরা পড়ার পর সরকার বিষয়টি প্রথম আমলে নেয় ২০১২ সালে। এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসায়ের মাধ্যমে এক যুগ ধরে (২০০০-১২) ডেসটিনি কোম্পানি মানুষের কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রতারণা করে নিয়েছে। এ ঘটনায় দুদকের মামলা দায়েরের পর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তিহীন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে এমএলএম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করা হয়। এতে বলা হয়, লাইসেন্স ছাড়া বহু ধাপ বিপণন কার্যক্রম চালানো যাবে না; যেসব প্রতিষ্ঠানের এ কার্যক্রম রয়েছে, আইনটি পাসের পর ৯০ দিনের মধ্যে তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ এ কার্যক্রম চালালে তার ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হবে। এ আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম ব্যবসা করা যায় না। সরকারের অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইন পাসের পরও নতুন নতুন নামে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করছে অনেকে। এতে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। প্রতারণার অভিযোগে সরকার এমএলএম বাণিজ্য নিষিদ্ধ করেছিল। আশা করা হয়েছিল এ পদক্ষেপে কাজ হবে। মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে সর্বস্ব লুট করার অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ হবে।