ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ: তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত

4
ফাইল ফটো
Spread the love

আসাদুজ্জামান ইমন, ঢাকা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ভারতের ওডিশা অন্ধ্র প্রদেশের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেও গতিপথ পরিবর্তন করে সেটি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়াগায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থায় সতর্ক সংকেত বাড়িয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা পায়ারা সমুদ্রবন্দরকে নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্নিঝড়টি আরো উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ফলে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। সকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন রয়েছে। জাওয়াদ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটির নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝড়টি দুপুর ১২টার পর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে হাজার কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার এবং পায়রা সুমদ্র বন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিন-দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলা হয়েছে। জাওয়াদের প্রভাবে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা পটুয়াখালীর উপকুলজুড়ে শনিবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। ফলে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। শনিবার বিকেলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জাওয়াদ আতঙ্কে কলাপাড়া উপকূলজুড়ে কৃষকের ধান কাটার হিড়িক লেগেছে। কৃষকরা পাকা ধান তো দুরের কথা, কাঁচাপাকা ধানও কেটে বাড়িতে তুলছেন। বছরের একটি মাত্র আমন ফসল ঘরে তোলার শঙ্কা নিয়েই কৃষকরা যে যেভাবে পারছেন ধান কেটে ঘরে তুলছেন। হাইলা-কামলা, কৃষাণদের অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে কৃষকরা মাঠে ধান কাটার কাজে নেমেছেন কোমর বেধে। আবার বহু কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনেও ধান কাটছেন। সারাবছরের খোরাকি চাল সংরক্ষণের অবলম্বন আমন ধান। তাও যদি সম্ভাব্য ঘুর্ণিঝড়ে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। শুক্রবার রাত থেকে কলাপাড়ার পায়রা বন্দরসহ গোটা উপকূলজুড়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা চরম শঙ্কায় পড়েছেন। টিয়াখালী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, দেড় কানি (১২ বিঘা) জমির ধান মেশিনে কেটেছেন। আরও বাকি ১৫ কানি। কিছু ধান কাঁচা থাকলেও বৃষ্টিসহ ঝড়োহাওয়ায় কেটে ফেলেছেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের ধান কেটে ঘরে তোলার মহাব্যস্ততার দৃশ্য। কুমিরমারা গ্রামের ধান সবজি চাষী সুলতান গাজী জানালেন, কৃষকরা যে যেভাবে পারছেন ধান কেটে ঘরে তুলছেন। এই মুহুর্তে বৃষ্টি হলে পাকা ধান ক্ষেতেই নষ্ট হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, ৮০ ভাগ ধান পাকলেই ধান কাটতে হয়। তিনি জানান ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ করেছেন কৃষকরা। এখনও মাঠে অন্তত ৩০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া শ্রমিক তো আছেই। কারণ এই মুহুর্তে বেশি বৃষ্টি হলে আমন ধাণের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে হারভেস্টর দিয়ে ঘন্টায় এক একরের বেশি জমির ধান কাটা সম্ভব। কৃষকরা চরম উৎকন্ঠা নিয়ে আমন ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত।