ইতিহাস গড়লেন যশোর আদালতের বিচারক

2
Spread the love


যশোর অফিস||


যশোরে একদিনে ৪১টি মামলার রায় দিয়েছেন জেলা যুগ্ম দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক শিমুল কুমার বিশ্বাস। অস্ত্র, চোরাচালান, মাদক ও চেক ডিজঅনারের অভিযোগে এ মামলাগুলো চলছিল। সোমবার (২৯ নভেম্বর) মাত্র আড়াই ঘণ্টায় তিনি এ রায়গুলো দিয়েছেন। এর মধ্যে রায়ে ২৬ মামলায় ২৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে সাজাপ্রাপ্ত সব আসামি পলাতক রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট লতিফা ইয়াসমীন ও ভীমসেন দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন ও ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইনজীবীরা। আদালত সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্র মামলায় যশোর সদর উপজেলার সীতারামপুর গ্রামের শেখ আব্দুল করিমের ছেলে কবির হোসেন ঠান্ডুকে ৭ বছর সশ্রম কারাদ-, মাদক ও চোরাচালানের মামলায় নরেন্দ্রপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে রেশমা বেগমকে ৫ বছর সশ্রম কারাদ- ও ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের সশ্রম কারাদ-, শংকরপুর এলাকার ইবাদ আলীর ছেলে ইমরান খানকে মাদক মামলায় ৪ বছর সশ্রম কারাদ- ও ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের সশ্রম কারাদ-, অভয়নগরের গোয়াখোলা স্কুলের পাশের বাসিন্দা আব্দুল গণির ছেলে আবুল কালাম ওরফে মাসুদ রানাকে ৪ বছরে সশ্রম কারাদ- ও ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের সশ্রম কারাদ-, শার্শার রাড়ীপুকুর গ্রামের মৃত কওসার আলীর ছেলে মফিজুল ইসলামকে ৩ বছর সশ্রম কারাদ- ও ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একই আদালতের রায়ে শার্শা উপজেলার ইছাপুর গ্রামের আফছার আলীর ছেলে মিজানুর রহমান, বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় গ্রামের মৃত মোকছেদ সরদারের ছেলে আলী কদর, বেনাপোল পোর্ট থানার ঘীবা গ্রামের ইউনুস আলী মোড়লের ছেলে আব্দুল আলীম ও একই এলাকার আব্দুল আলীমের স্ত্রী আলেয়া বেগম, বেনাপোল পোর্ট থানার বালুন্ডা গ্রামের আকবরের ছেলে আলমগীর হোসেন, ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে সিজান মাহমুদ, মোবারকপুর গ্রামের আলাউদ্দীন আলীর ছেলে সালাউদ্দীন, যশোর শহরের চোপদারপাড়ার আকামত আলীর স্ত্রী মালেকা বেগম, যশোর শহরের শংকরপুরের শ্রাবন রহমান হাসিবের স্ত্রী পারভীন আক্তার, শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের কাদের ধাবকের ছেলে মিঠু ধাবক, শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মৃত জয়নালের ছেলে আশাদুল ইসলাম আশা, অভয়নগর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত মহর আলীর ছেলে ওহিদুল ইসলাম গাজী, বেনাপোল সাদিপুর গ্রামের মৃত এরশাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলম, মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্বস্বর গ্রামের কবির মাতব্বরের স্ত্রী মমতাজ বেগম, ফরিদপুর সদরের খাবাসপুর গ্রামের মাধব কুন্ডুর ছেলে প্রদীপ কুন্ডু, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর বাহেরচর গ্রামের মুকুন্দ কুমার দাসের ছেলে সনজিৎ দাস, সাতক্ষীরা সদরের গোবিন্দকাঠী গ্রামের আমজেদ মিস্ত্রির ছেলে সিরাজুল মিস্ত্রীকে ২ বছর সশ্রম কারাদ- ১ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাস সশ্রম কারাদ-েে আদেশ দেওয়া হয়েছে । এছাড়া রায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদ- ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে- যশোর সদর উপজেলার মালিরহাট গ্রামের মাঠপাড়ার মৃত আসানুল হকের ছেলে হাসিবুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের সুবারিঘাটা গ্রামের কালীদাসের ছেলে অশোক কুমার দাসকে। চেক জালিয়াতি মামলার রায়ে যশোর সদরের ভেকুটিয়া গ্রামের রুহুল আমিন মুন্সির ছেলে হাফেজ নুর মোহাম্মদকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদ- ও চেকে বর্ণিত ৫ লাখ টাকা জরিামান, মণিরামপুরের দুর্গাপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে রুহুল আমিনকে ৩ মাসের বিনাশ্রম ও চেকে বর্ণিত দেড় লাখ টাকা, ঢাকার পুরানাপল্টন এলাকার আজহার আলীর ছেলে ইমাম হাসান সাইফীর ১ বছর বিনাশ্রম কারাদ- ও ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন এই বিচারক। এ ছাড়া একই আদালত আলাদা আরও ১৫টি মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম না হওয়ায় ১৬ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের এপিপি ভীম সেন বলেন, বিচারক প্রতিদিনের মতো আজ সকাল স সাড়ে ১০টায় এজলাসে উঠেন। এরপর মামলা গ্রহণ, শুনানি, সাক্ষীগ্রহণসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম শেষ করেন। বিচারক লাঞ্চ বিরতিতে না গিয়ে দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিনি ৪১টি মামলার রায় ঘোষণা করেন। বিচারক শিমুল বিশ্বাসের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, যে মামলাগুলোর রায় হয়েছে সেগুলো অনেক পুরাতন মামলা। একইদিনে রায় দেওয়ার উদ্দেশে বিভিন্ন সময় শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য সব মামলার রায়ের দিন একটি নির্দিষ্ট তারিখেই দেওয়া হয়েছিল। তবে এটা আপনারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখবেন। যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি মাহাবুব আলম বাচ্চু বলেন, এ ঘটনা ইতিবাচক ও নেতিবাচক যেভাবেই দেখেন বিষয়টি নজিরবিহীন। এ ধরনের ঘটনা আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে দেখিনি। তবে বিচারক মামলার রায়গুলো একদিনে লেখেননি। আগে পরে লিখেছেন আজ হয়তো রায় ঘোষণা করেছেন। আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, একদিনে ৪১ মামলার রায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী জানান, একদিনে এত মামলার রায় এর আগে যশোরের আদালতে হয়নি।