মিলি রহমান ।।
আমাদের শরীরের জন্য লেবু ভালো। লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ত্বক ভালো রাখে, দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। লেবুর শরবত পছন্দ করেন না এমন লোক কমই আছে। প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস লেবুর শরবত প্রশান্তি এনে দিতে পারে। ওজন কমাতেও লেবুর জুড়ি মেলা ভার। সকালে লেবু জল শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে। লেবুর গুণ প্রচুর তবে যেকোনো খাবারের মতোই লেবু ও বেশি খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত লেবু খেলে নানান ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়, যেগুলো আমাদের অনেকেরই জানা নেই ।
১. বুকে জ্বালা
অতিরিক্ত লেবু খেলে অ্যাসিডিটি, বুকে জ্বালা ধরা এবং এসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা তৈরি হয়। নিয়মিত লেবু খেয়ে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হলে, এটি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শই দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
২. কিডনির সমস্যা
লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে অক্সালেটেড। যা কিডনি তে ক্রিস্টাল বা পাথর তৈরি করতে পারে। যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে, তাদের লেবু এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়
অতিরিক্ত লেবু খেলে লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দাঁতের উপর এক সাদা আস্তরণ পড়ে যায়। সম্প্রতি ব্রাজিলের একটি গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে সফ্ট ড্রিংক খেলে দাঁতের যে সমস্যা হয় লেবুর থেকেও ঠিক একই সমস্যা হয়। তবে, যারা প্রতিদিন সকালে উঠে লেবু জল খান তাঁরা দিনে দু’বার ব্রাশ করার মাধ্যমে দাঁতের এই সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
৪. পাকস্থলীর আলসার
লেবুর অ্যাসিডিক প্রকৃতি পাকস্থলীর আবরণকে ইরিটেট করে। যা থেকে আলসার তৈরি হতে পারে। আলসারের সমস্যা থাকলে তাই লেবু এড়িয়ে চলাই উচিত।
৫. ফোঁড়া বা ফুসকুড়ির সমস্যা
দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে মুখের মধ্যে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
৬. অ্যাসিডিটি এবং বমির সম্ভাবনা
লেবুর রসে ভিটামিন সি থাকে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু ,অতিরিক্ত ভিটামিন সি ভালো নয়। অতিরিক্ত লেবু খেলে অ্যাসিডিটি ও বমি হতে পারে। যা একসময় গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যে কোনো ডিটক্স ডায়েট ড্রিংক থেকেই এই সমস্যা হতে পারে।
৭. বারবার বাথরুম পাওয়া, শরীর শুকনো হয়ে যাওয়া
গরম পানিতে লেবু যেহেতু ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে তাই বারে বারে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও পেট ফেঁপে যাওয়া, শরীর শুকনো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। বারবার প্রস্রাব হওয়ার ফলে ইলেকট্রোলাইটস ও সোডিয়াম দেহের থেকে বেরিয়ে যায় এবং ব্লাডারে চাপ পড়ে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৮. সানবার্ন হয়
লেবুতে অনেকের অ্যালার্জি আছে যা অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। লেবু খেয়ে রোদে বেরোলে স্কিনে লাল র্যাশ দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে কালো ছোপও দেখা দেয়। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের সংগে সূর্যালোকের বিক্রিয়ায় এই সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত লেবুর রস স্কিন ক্যানসার ডেকে আনে।
৯. রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়ায়
অতিরিক্ত ভিটামিন সি রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে অভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়।
১০. মাইগ্রেন বাড়ায়
সাইট্রাস মাইগ্রেন বাড়ায়। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের এমনিই লেবু জাতীয় ফল না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রতিদিন ১২০ মিলি লিটার পর্যন্ত লেবুর রস খেতে পারেন। এর বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যেকোনো ধরনের অসুস্থতার সময় লেবুর রস খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। যদি লেবু খাওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তবে দ্রুত চিকিত্সকের কাছে যান।
সূত্রঃ ডেইলি হান্ট