খুলনার ৩৪টিসহ ১৬০ ইউপিতে নির্বাচন আজ: বিনা ভোটে জয়ের রেকর্ড

5



বিশেষ প্রতিনিধি||


করোনা মহামারির কারণে স্থগিত প্রথম ধাপের দ্বিতীয় কিস্তির ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন আজ। এসব ইউনিয়নের ৪৫টিতেই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না। এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হার ২৮ ভাগ। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী আজ ষষ্ঠ ধাপের ৯টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে তিনটি পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী বিনা ভোটে বিজয়ী হয়েছে। পৌরসভা তিনটি হলো লাঙ্গলকোট, বোয়ালখালী ও কবিরহাট। এবারের ইউপি নির্বাচনের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড হচ্ছে। এরআগে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে ২১২ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ ছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট ১০০ জন প্রার্থী ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় এটিই ছিল বিনা ভোটে নির্বাচিতের রেকর্ড। এবারের প্রথম ধাপের দ্বিতীয় কিস্তির নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের ৬৬টি ইউপি’র মধ্যে ৩৮টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় বিনা ভোটেই তারা নির্বাচিত হচ্ছেন। বাগেরহাটের বাইরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৪টি এবং খুলনার ১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে কয়েক ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। গত ৩রা মার্চ প্রথম ধাপে ৩৭১টি ইউপি’র ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। গত ২১শে জুন ২০৪টি ইউপিতে নির্বাচন হওয়ার পর বাকি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে একটি বড় সংখ্যক প্রার্থী বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটা তো নতুন কিছু নয়। এখন তো নির্বাচন এমনই হয়ে আসছে আর এভাবেই হবে। কে করবে পরিবর্তন। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো যে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর নির্বাচন হতো আমরা তো আর সেই নির্বাচন ফিরে পাবো না। মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ নেই। ভোট কেন্দ্রগুলো থাকে খালি। মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতো তাহলে ভোটকেন্দ্রগুলো খালি পড়ে থাকতো না। দীর্ঘদিন ধরে একই ভোটের সংস্কৃতিতে মানুষ এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। এজন্য কেউ কোনো কথা বলছে না। তিনি বলেন, সরকার তো বলছে মানুষ শান্তিতে আছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। দেশের ভবিষ্যৎ ভালো। আমি মনে করি এমন দেশে নির্বাচন না হলেও সমস্যা নেই। কারণ দেশে যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে এই ধরনের নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কোনো দরকার নেই। সরকার জেলা প্রশাসক দিয়ে এসব নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। এখন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গণমাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যদি পাঁচটি করে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনিটরিং করে। সরকার কতো বলছে আর তাদের কাছে কি রেকর্ড আছে এটা যদি প্রকাশ করে দেয় সেটাই হবে জাতির জন্য বেস্ট ওয়ে, বেস্ট সার্ভিস। এই রেকর্ডগুলো একসময় ইতিহাসের নথিপত্র হিসেবে কাজ করবে।

।। খুলনায় ৩৪ ইউপিতে ভোট।।


করোনার কারণে প্রথম ধাপের স্থগিত থাকা খুলনার ৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। স্থানীয় এ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুলনা জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, কয়রা, দাকোপ, দিঘলিয়া ও পাইকগাছা পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে খুলনার বটিয়াঘাটার গংগারামপুর, বালিয়াডাঙ্গা, আমিরপুর; কয়রার আমাদি, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা, উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী; দাকোপের পানখালী, দাকোপ, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, সুতারখালী, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, বাজুয়া, বানিশান্তা। এছাড়া দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট, বারাকপুর, দিঘলিয়া, সেনহাটি, আড়ংঘাটা ও যোগীপুল; পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা, রাড়ুলী, গড়ইখালী, গদাইপুর, চাঁদখালী, দেলুটি, লতা, লস্কর ও কপিলমুনি ইউনিয়ন। খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ৩৪টি ইউপিতে প্রথম ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড ও আনসার নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, খুলনার ৩৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৬ জন। এছাড়া সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী ৪৬৪ জন এবং ৩০৬ সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী রয়েছেন ৯ হাজার ৪৮৩ জন। এরমধ্যে দাকোপের লাউডোব ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ যুবরাজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কয়রা উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে শেখ সোহরাব আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। খুলনার ৩৪টি ইউনিয়নে ৩২৭ কেন্দ্রের ১ হাজার ৯০০ ভোটকক্ষে ভোটারের সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন ও পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন। এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দুটি ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলার গংগারামপুর ইউনিয়নের ১০টি ভোটকেন্দ্রের ৪৯ ভোটকক্ষে ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ১৪৭ জন এবং দিঘলিয়ার বারাকপুর ইউনিয়নের ৯ কেন্দ্রের ৫৭ ভোটকক্ষে ১৯ হাজার ৪৮৫ জন ভোটার রয়েছেন। খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ইউপি নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে মাঠে পুলিশ, র‌্যাব কাজ করছে। ভোটারদের নিরাপত্তাসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের জন্য ৫ উপজেলায় ২ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে রয়েছেন।


।। খুলনা বিভাগের ১০ ইউপিতে প্রথমবার ইভিএমে ভোট।।


আজ ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১৬০টি ইউপিতে এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে খুলনা বিভাগের তিন জেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে এসব ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী জানান, খুলনা অঞ্চলের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে এবার প্রথম ইভিএমে ভোট হবে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় ৯৫টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গংগারামপুর ইউনিয়নের ১০টি ভোট কেন্দ্রের ৪৯ ভোটকক্ষে, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের ৯ কেন্দ্রের ৫৭ ভোট কক্ষে, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৩৭ ভোটকক্ষে, রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৩৭ ভোটকক্ষে, মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৩৭ ভোটকক্ষে, সোনাইল তলা ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ২৫ ভোটকক্ষে, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৪৪ ভোটকক্ষে এবং তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৫১ ভোটকক্ষে, তালা ইউনিয়নের ১১টি কেন্দ্রের ৭৭ ভোটকক্ষে ও খলিলনগর ইউনিয়নের ১১টি কেন্দ্রের ৬৪ ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। খুলনার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম জানান, খুলনার ৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে দুটিকে ভোট হবে ইভিএমে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। তার দেওয়া তথ্য মতে, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরমধ্যে আ.লীগের একজন, ইসলামী আন্দোলনের একজন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩ জন প্রার্থী ও সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। ইউনিয়নের ৯টি ভোট কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৪৮৫ জন ভোটার রয়েছেন। বটিয়াঘাটা উপজেলার গংগারামপুর ইউনিয়ন পরিষদে ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে আ.লীগ ও ইসলামী আন্দোলনের একজন করে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১ জন প্রার্থী ও সাধারণ ওয়ার্ডে ৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইউনিয়নের ১০টি ভোট কেন্দ্রে ১৬ হাজার ১৪৭ জন ভোটার রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. আব্দুস সাত্তার জানান, গংগারামপুর ইউনিয়নে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উপজেলার বুড়িরডাংগা ও সোনাইতলা ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে দুই ইউনিয়নের ১৮টি কেন্দ্রে মক ভোটিং হয়েছে। এতে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।