তালেবান পরিচয়ে জজকে চিঠি দিয়ে হুমকি

10
হুমকি দিয়ে পাঠানো চিঠি
Spread the love

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট ।।

জয়পুরহাট নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের জেলা দায়রা জজ মো. রুস্তম আলীকে ডাকের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। ‘তালেবান গোষ্ঠী’ সংগঠন পরিচয়ে এই চিঠি দেয়া হয়। চিঠিটির প্রেরকের জায়গায় জয়পুরহাট সদরের দুর্গাদহ ভাদশার আশরাফ আলী নামে এক ব্যক্তির নাম লেখা রয়েছে।

ঘটনায় জজ রুস্তম আলী জয়পুরহাট পুলিশ সুপার বরাবর একটি জিডি করেছেন। পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর থানার ওসি আলমগীর জাহানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কৌশলী অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রোস্তম আলী প্রেরক উল্লেখ করা ওই চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘প্রথমে রহিল আমাদের ছালাম। পরকথা: আমরা তালেবান গোষ্ঠি। আফগানিস্তানের মতো অতি শিগগিরই বাংলাদেশ দখল হবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত শিবির এদের আমরা পছন্দ করি না। তালেবানরা অন্যায়ের পক্ষে নয়, ন্যায়ের পক্ষে বাংলাদেশ চলবে তালেবানের অধিনে। বিচার আচার হবে কোরান সুন্না অনুযায়ী। জামায়াত শিবির এর জ্বালাও পোড়াও নির্মূল হবে এবার। জামায়াত শয়তানের দল। খুনী ফেরাউনের স্বভাব এই দলের। আপনি বিচারক ন্যায় অন্যায় বিচার হচ্ছে না। কথায় কথায় আসামিদের সাজা দাও কিভাবে। পরিবারে কত অশান্তি খাবার থেকে শুরু করিয়া নানা সমস্যার ভিতরে দয়ামায়া করিবেন। নামাজ সব সময় পড়িবেন। কোর্টে যাওয়ার সময় মাথায় তালেবান পাগড়ী পরিধান করিতে হইবে। পাগড়ী পরিধান না করিলে আদালতে যেতে দেয়া হবে না, হামলার স্বীকার হতে হবে।’

চিঠিতে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘আদালতের আশপাশে পুলিশ থাকবে না, পাখির মতো মারব এদের। পুলিশ হচ্ছে দেশের শত্রু জনগণের শত্রু, ম…, ধ….., চাঁদাবাজিসহ প্রতিটি কাজে তাহারা জরিত। ভারত বাংলাদেশ হবে তালেবান রাষ্ট্র। বাংলাদেশের নাম হবে পূর্বপাশা আর ভারতের নাম হবে সুলতান সাহা, হিন্দু রীতিনীতি চলবে না দুই দেশে। বাংলাদেশের বহু জায়গা ভারতের দখলে আছে, তাহা তালেবানরা ফিরিয়ে নিবে ছাড়বে না। জয়পুরহাট জেলার পাঁচটি থানা ধ্বংস করবো, সবার আগে পুলিশ মারবো সব। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিপি, র‍্যাব, আনচার বাহিনী, বিমান বাহিনী এদের চুল পরিবাণ ক্ষতি হবে না। এই ৬টি বাহিনী কার ক্ষতি করে না। দুষিত পদার্থ হচ্ছে পুলিশ বাহিনী, তালেবান বাংলাদেশ নেয়ার পর পুলিশ বাহিনী বাতিল করিবে ১০০% সত্য, এই পুলিশের বদলে হবে মুজাবীদ বাহিনী।’

হুমকি দিয়ে চিঠিতে লেখা হয়, ‘পাগড়ী ছাড়া কোনো বিচারক অথবা আইনজীবী অত্র আদালতে প্রবেশ করে, তবে লাশ হয়ে ফিরে যাবে বাসায়। আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ পাইলে কিয়ামত আরম্ভ হবে। বিচার করা আদালত করিবেন, চুল পরিমান আপনাদের হবে না, তবে শর্ত মানিয়া আসতে হবে, পাগড়ী পরিধান করতে হবে, সব কলো কাপড়ের পাগড়ী হতে হবে। কথা অথবা আদেশ অমান্য করিলে বিরাট সমস্যা হবে। পরিশেষে জীবনটা হারাবেন।’

চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমেরিকা আমরা টাইম দেই নাই। এই সাধারণ বাংলাদেশ মাত্র। বাংলাদেশের ২৫ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে রহিয়াছে। এছাড়া বাংলাদেশে আছে ৫৫ হাজার। আমাদের হাতে যত অস্ত্র আছে তাহা বাংলাদেশের সরকারের হাতে নেই। অফিস আদালতে কোনো প্রকার ঘুষ দালাল থাকবে না। প্রতিটি গ্রামের বিচার গ্রামেই হবে এজন্য সরদার নিয়োগ হবে। বাদী বিবাদীকে ডাকিয়া মামলা আপোষ করার ব্যবস্থা করিবেন মহত্বের কাজ। কথায় কথায় মেয়েরা মামলা করে, এদের প্রশ্রয় দিবেন না। তালেবান রাষ্ট্র নেওয়ার পর নারী অধিকার খর্ব করা হবে। বেপরোয়াভাবে নারীরা চলতে পারবে না। এই পর্যন্ত সমাপ্ত।’

চিঠির নিচে লেখা রয়েছে, নিবেদক, তালেবান গোষ্ঠীর বীরযোদ্ধারা, দোগাছি ইউনিয়ন/ভাদশা ইউনিয়নসহ ৫টি উপজেলাবাসীর তালেবানরা।

জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, তালেবান সংগঠন নামে জয়পুরহাটের বিচারককে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে। এটি নিছকই একটি হুমকি। কারণ যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেনো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। যারাই এই চেষ্টা করবে তারাই এই দেশে টিকে থাকতে পারবে না।

জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর জাহান বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, একটি কুচক্রী বা দুষ্কৃতিমহল দেশে আলোচনায় আসার জন্য জনগণের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে ঘটনা ঘটাতে পারে। ঘটনায় একটি জিডি পেয়েছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। তদন্ত করে এর সাথে জড়িতদের আমরা গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবো।