সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি

9
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার ।।

কৃষকের পুনর্বাসন ও প্রণোদনা, ফসল উৎপাদন এবং তদারকি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্যশষ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন খুলনার কৃষকরা। এ জেলার ৯ উপজেলার উৎপাদিত শাক-সবজি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে পাইকারী সবজি ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন কে কেন্দ্র করে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আধুনিক ভিলেজ মার্কেট, ভিলেজ মার্কেটে এ অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষি প্রণ্য সরাসরি উরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদনের লক্ষে কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করায় এর সুফল পাচ্ছে এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা। ফলে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় খালে-বিলে কৃষাণীর চালে মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে শোভা পাচ্ছে লাউ, ভেন্টি, করলা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, পলা, শিম, উচ্ছে, ঝিঙে, কুমড়া, পেঁপে, শসা, পুইশাক, লাল শাক, খিরাইসহ নানাবিধ সবজি। কৃষি প্রকল্পের বিভিন্ন মৌসুম ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। সংগত কারণেই রবি মৌসুমে গম, আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টা, ইক্ষু, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মসুর, মুগ, খেসারী, মটর, মাসকলাই, অড়হর, তরমুজসহ শীতকালীন শাক-সব্জির উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খুলনার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা দীর্ঘদিন খাদ্য সঙ্কটে থাকলেও এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করছেন। বিশেষত খুলনার বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া, রূপসা, কয়রা, পাইকগাছা, তালা উপজেলার মিঠাবাড়ী পাচপাড়া, সরুলিয়া, ধানদিয়া, নগরঘাটা, তৈলকুপি, যুগিপুকুরিয়া, মাগুরা, বালিয়াদাহ, খেশরা, হরিহরনগর, মাদরা, কৈ খালি, শুকতিয়া, টিকারামপুর, বাগমারা, গাছা, মুড়াগাছাসহ একাধিক এলাকার জমিতে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। কৃষকরা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছে। ফলে ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে খুলনাঞ্চলের কৃষকরা। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, গত ৫ বছরে খুলনায় রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশষ্য উৎপাদন হচ্ছে। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় কাটিয়েও খুলনার কৃষক খাদ্যশষ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, দানা শষ্যের পাশাপাশি শাকসবজি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে খুলনায়। গত ৫ বছরে গড়ে সাড়ে ৩ লাখ টন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে খুলনায়। বিগত দেড় দশকে কৃষিতে খুলনায় উন্নয়ন হয়েছে পূর্বের তুলনায় প্রায় তিন গুণেরও বেশি। দক্ষিণাঞ্চলের উপকলীয় জেলা হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সেচের পানির দুষ্প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যা কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। গত ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে সিডর ও ২০০৯ সালের মে মাসে প্রলয়ংকরী আইলার ছোবলে উপকূলীয় এলাকায় কৃষি মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। এর পরে আমফান ও করোনা তার প্রভাব সামগ্রিক কৃষি সেক্টরকে বিপর্যস্ত করে তোলে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দুই যুগ আগেও উপকূলীয় এলাকায় একটি বা দুটি ফসল হতো। বছরের অধিকাংশ সময় কৃষিজমি পতিত অবস্থায় থাকত। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ফলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সে জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আবার একই জমিতে মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একসঙ্গে একাধিক ফসলও চাষ হচ্ছে। এভাবে জমির বহুমুখী ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। জানা যায়, প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় সার্ভে করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করনের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষক বান্ধব সরকার । সরকার উপকুলীয় অঞ্চলের কৃষকের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের উপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ জেলার বিএআরআইবি এর কৃষিগবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করনের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে  মিশ্র ফলের বাগান করতে ফলের চারা, বেড়া সরঞ্জাম, সার, কীটনাশক দিয়েছেন এবং আমাকে খেত তৈরী ও চারা রোপনের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছে এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে । উদ্ভাবিত কার্যকরী প্রযুক্তিসমূহ মাঠ পর্যায়ে দ্রুত জনপ্রিয় করতে প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার্বিক সহযোগিতা উচ্চফলনশীল জাত সমূহের উপযোগিতা যাচাইয়ের পর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা  হচ্ছে।দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপযোগী সবজি, ফল, ডাল, আলু, তৈলবীজ, গম, ভুট্টা, নারিকেল, তাল এবং খেজুরের উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর পথ সহজ হবে।