শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে বলে মঙ্গলবার খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঠিক এ দিনই আরেকটি খবর মানুষের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের কাছে সে এক বিশাল পাওয়া। খবরটি হলো- ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত। তাও আবার কোনো রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই। জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড দেখালেই নেওয়া যাবে সেই টিকা।
মূলত এতদিন শহর কেন্দ্রীক যে টিকাকরণ চলছিল, তা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত। আজ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর সেই ঘোষণা আসে। আগামী ৭ আগস্ট থেকে এই টিকা পাবেন গ্রামের মানুষ। সে জন্য ইউনিয়ন পরিষদে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। তাতে সহযোগিতা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাকণের কাজ শুরু হওয়ার পর ভারতের কাছ থেকে সঠিক সময়ে টিকা না পাওয়ায় টিকাদানের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে পরে বাংলাদেশ। এরপর চীন-আমেরিকার-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া টিকা দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের টিকাকরণ শেষ করা গেছে। কিন্তু জনসংখ্যার বড় একটা অংশই এখনো টিকা পায়নি। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ।
আমরা জানি, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় গ্রামেও ব্যাপক সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সেখানেও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামাঞ্চলে টিকাকরণ জোরদার করে তা প্রতিরোধ করতে চাইছে সরকার। বিশেষ করে গ্রামের বয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে প্রশাসন। পদ্ধতিটাও সহজ করা হয়েছে। শুধু এনআইডি কার্ড থাকলেই নির্ধারিত বয়সীরা টিকা পাবেন। এমনকি এনআইডি কার্ড না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই- বিশেষ ব্যবস্থায় নিবন্ধন করে টিকা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই- করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে হলে ঠিকা নিতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখন পর্যন্ত টিকাই একমাত্র উপায়। তার প্রমাণও কোনো দেশ এরই মধ্যে দিয়েছে। যেমন: যুক্তরাজ্য। দেশটির সব মানুষকে টিকা দেওয়ার পর লকডাউন, মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতার মতো বিষয়গুলো তুলে দিয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশও হয়তো পিছিয়ে থাকবে না।
আমরা মনে করি, গ্রামের মানুষের কাছে ঠিকা পৌঁছে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত সরকারের যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ। এতে বহু মানুষের জীবন যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি ভাইরাসটির বিরুদ্ধে যুদ্ধেও শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ।