ঐতিহাসিক খান জাহান আলী মাজারের কুমির মাদ্রাজের চিকিৎসা শুরু

39
Spread the love

বাগেরহাট প্রতিনিধি

মারস ক্রোকোডাইল’ বা জলাভূমির কুমির এখন এদেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায়। প্রজাতির কুমির এখন আছে শুধু বাগেরহাটে হযরত খানজাহান আলীর (র.) মাজার দিঘিতে আর গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। আগে কুমিরের বিচরণ ছিল পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন জলাভূমিতে। আর এখন এর অস্তিত্ব শুধু বাগেরহাট গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রয়েছে।

বাগেরহাটের দিঘিতে যে কুমির দুইটি রয়েছে তা এখন বয়স্ক অসুস্থ। বয়সের ভারে অসুস্থতায় হারিয়েছে তাদের প্রজনন ক্ষমতাও। তাই বিলুপ্তের পথে কুমিরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ।

বুধবার (জুলাই) দুপুরে ওই পুকুরের ৫০ বছর বয়সের পুরুষ কুমির মাদ্রাজের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাকে বেঁধে তোলা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনমতো কয়েকদিন রেখে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ বন্যপ্রাণী লালন পালনে অভিজ্ঞ হাওলাদার আজাদ কবির কুমিরটিকে পুকুর থেকে তুলে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছেন।

কুমিরটিকে সুস্থ করতে তাৎক্ষণিক ভাবে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। পর্যবেক্ষণের জন্য কুমিরটিকে আগামী দশ দিন দীঘি সংলগ্ন একটি বাড়িতে রাখা হবে।

হাওলাদার আজাদ কবির জানান, দিঘির পুরুষ কুমিরটির ডান চোখ আগে থেকেই নষ্ট, বাকি বাম চোখটিও নষ্টের পথে। এছাড়া শরীরের আর কোথায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে তা ভালো করে দেখা হচ্ছে। আশা করছি ভালোভাবে রোগ নির্ণয় চিকিৎসা করা গেলে ভালো হয়ে উঠবে। এদিকে, অপর যে নারী কুমিরটি রয়েছে সেটিরও একটি চোখ নষ্ট। সেটি ডিম দিলেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না।

চোখ নষ্ট হওয়ার বিষয়ে আজাদ কবির বলেন, মানুষের অত্যাচারে কুমিরের চোখ নষ্ট হয়েছে। কারণ ওই দিঘিতে যখন মাছ ধরা হয় তখন জালে কুমির আটকে গেলে কুমিরের চোখে খোঁচানো হয়। চোখে খোঁচালে কুমির দুর্বল হয়ে পড়ে এই সুযোগে তারা জাল ছাড়িয়ে নেয়।

তিনি আরো বলেন, কুমিরটি দেখে আমাদের কাছে বয়স অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বছর মনে হয়েছে। যার ফলে তার ওজন অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে, এর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ কেজির মত হবে।

অপ্রয়োজনীয় চর্বি কমানোর জন্য কুমিরটিকে পরিমিত খাবার দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

কুমিরটিকে পুকুর থেকে তোলার সময় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। তার নির্দেশেই কুমিরটির চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কুমির দুটি ‘মাদ্রাজ কুমির’ নামে পরিচিত। কারণ কুমিরগুলো ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা হয়েছিল। কুমির দুটির মধ্যে দিঘিতে এখন দুটি কুমির রয়েছে। দেড় বছর আগে মারা গেছে ‘কালা পাহাড়’ আর চার বছর আগে ‘ধলা পাহাড়’ নামের কুমিরটি। তারপর আরও দুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে সুন্দরবনে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। সর্বশেষ যে দুইটি রয়েছে তাও এখন অসুস্থ।

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ফকির বলেন, কুমিরটি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। ডিসি স্যারের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন মিলে খুব সতর্ক ভাবে কুমিরটিকে দড়ি দিয়ে বেধে উপরে উঠিয়েছি। এসময় করমজলের কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবীর আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটিকে ওপরে উঠানোর পরে আমরা তাৎক্ষনিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। সে এখন মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। তবে তার চোখ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। এবং তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

খানজাহান আলী মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, মিঠা পানির কুমির খানজাহান আলীর মাজার সংলগ্ন দিঘী সহ বাগেরহাটের একটি ঐতিহ্য। বেশ কিছুদিন ধরে কুমিরটি অসুস্থ ছিলো। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। আজকে কুমিরটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আশা করি কুমিরটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কিছু লোভী প্রকৃতির মানুষ কুমির তাদের ঘাটে রাখতে চায়। দর্শনার্থীদের কুমির দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা তাদের উদ্দেশ্য। এর জন্য তারা কুমিরকে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে থাকেন।

বিষয়টি নজরে এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

প্রায় ছয়শ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী খান জাহান আলী দীঘির শতবর্ষী কুমির কালাপাহাড় ধলাপাহাড় এর মৃত্যুর পর ২০০৬ সালে মাদ্রাজ থেকে মিঠাপানির দুটি কুমির এই দীঘিতে অবমুক্ত করা হয়।