সেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লুবনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত

4
Spread the love

০ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিনের (লুবনা) করোনাকালীন চিকিৎসক, নার্স কর্মচারীদের বরাদ্দের টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তদন্তে টাকা আত্মসাতের ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন আবাসিক হোটেলে থাকা দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা এবং হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নেন ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)

নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকার একটি দৈনিকে করোনায় হোটেলে না থেকেও চিকিৎসকদের বিল ৫৭৬০০ টাকা শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবিরকে প্রধান করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমের দপ্তরে পাঠানো হয়।

২০২১ সালের জানুয়ারি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জন অফিস প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হাসান ইমামের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিছু সংশোধন সংযুক্তির জন্য পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি ফেরত পাঠিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেই মোতাবেক গত এপ্রিল ২৫৩ নং স্মারকে ডা. শামীমা শিরিন লুবনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় প্রমাণাদিসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরে পড়ে আছে।

বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. শামীম কবির বলেন, আমরা সাধ্যমতো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আবাসিক হোটেল খাবার হোটেলের মালিক ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির অন্য সদস্য জানান, করোনাকালীন রহমানিয়া হোটেলের ভাড়া করা কক্ষগুলো বন্ধ ছিল। সেখানে কোনো ডাক্তার নার্স থাকেনি ঠিকই কিন্তু ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে খাবার হোটেলে কেউ খাবার খাননি। রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির জানান, আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। একই কথা জানান কমিটির আরেক সদস্য ডা. মিথিলা ইসলাম।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, প্রথমে আমরা যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম তা ফেরত দিয়ে কিছুটা সংযুক্তি জুড়ে দিয়েছিল পরিচালকের দপ্তর। দ্বিতীয় দফায় আমরা আবার প্রতিবদেন পাঠিয়েছি। এখন ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরের।

বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা জানান, তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

তবে অভিযোগের বিষয়ে এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার সঠিক তথ্য দেননি। ডাক্তাররা রোস্টার ডিউটি করেছেন। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন। কোনো টাকা আত্মসাৎ হয়নি।

তবে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাজহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড-১৯ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনো হোটেলে থাকেননি।

আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোন মাসে থেকেছেন সেটা তিনি জানাতে পারেননি। তবে তিনি প্রণোদনার টাকা পাননি।

এছাড়া হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত স্টাফরাও কোনো প্রকার সরকারি প্রণোদনার টাকা পাননি বলে জানিয়েছিলেন।