পরিবেশ নিয়ে ভাবেন কারা?

1
Spread the love

০ বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখের কারণে। কিন্তু সারাবিশ্বে হার মাত্র ১৬ শতাংশ। পরিবেশ দূষণ কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে কোনও আলাপে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। যারা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন করছেন, তারা বলছেন, পরিবেশ দূষণের কারণে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, কিন্তু সবাই কথা বলছি না। পরিবেশটা আসলে কী আর কীভাবে সেটা রক্ষা করা যায় নিয়ে সাধারণ জ্ঞানটুকুও নাগরিকদের নেই। তাই ক্ষমতাবানরা তাদের সুবিধায় পরিবেশ ধ্বংস করার সুযোগ পাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দরিদ্র নারী শিশুরাই ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণের শিকার। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করে। যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশ স্নায়বিক ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কারা পরিবেশ নিয়ে ভাববে? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-এর (বাপা) নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘পরিবেশ আমাদের দেশে কেন যেন কিছু বেসরকারি সংস্থা সরকারের রুটিন কর্মসূচি হয়ে গেছে। আমরা যারা নিয়মিত পরিবেশ অধিকার নিয়ে কথা বলি তারা আন্দোলন করতে গিয়ে এটাই দেখছি। আমাদের শিক্ষিত মানুষও পরিবেশ কী, এবং কেন পরিবেশ নিয়ে কীভাবে ভাববেন তা বোঝেন না। পিপড়া, কীটপতঙ্গও পরিবেশের অংশ। পরিবেশ মানে কেবল গাছ নয়, এই ধারণা স্পষ্ট করা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকের সঙ্গে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শুনেছি তারা মনে করেন এটা এনজিওদের একটা কাজ। এটা রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে তার ভাবনা নেই। পরিবেশ মানে সকল সৃষ্টির একটি আন্তঃজাল। এই জায়গায় মানুষকে যতটা শিক্ষিত করা দরকার ততটা করা হচ্ছে না। ফলে আমাদের আশেপাশে যা কিছু  আছে তা নিয়ে পরিবেশ এই শিক্ষাটুকু নিয়ে আমরা কেবল বৃক্ষকেই পরিবেশের আওতায় রাখছি।’

প্রাণ-প্রকৃতি প্রতিবেশ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, “আমরা যারা পরিবেশ নিয়ে কম ভাবি এই ‘আমরা’ কারা সেটি নির্ধারণ করা জরুরি। কৃষক, জেলে, বনজীবী, গ্রামীণ নারী থেকে আদিবাসী নারীর জীবনভাবনা তার চারধারের পরিবেশ ঘিরে। শালবন থেকে যখন একজন মান্দি নারী বনআলু খুঁড়ে আনেন তখন এর কন্দ শাখাকন্দগুলো তিনি মাটিতে পুঁতে রাখেন। চিম্বুক পাহাড়ে  নারীরা যখন ছড়া থেকে পানি আনেন তখন ছড়ার একটি পাথরেও আঘাত করেন না। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের ত্রিপুরা নারীরা বন থেকে ঔষধি গুল্মের কিছুটা রেখে দিয়ে তারপর সংগ্রহ করেন। যেন ওটা টিকে থাকে। উত্তরাঞ্চলের সাঁওতাল কী ওঁরাও- সবাই শ্রদ্ধা-কৃত্যের মাধ্যমে গ্রামে বিশাল সব কারাম গাছ সংরক্ষণ করেন। আদিবাসী গ্রাম ছাড়া এই গাছ আর কোথাও নেই। সুন্দরবনের বনজীবীরা মধুসংগ্রহের সময় বিশেষ নিয়মে চাক কাটেন। গোলপাতা সংগ্রহের সময় মাঝের কচি পাতা রেখে দেন। রাসায়নিক কৃষির দুনিয়ায় কৃষকরাই সুরক্ষা করছেন লাউ-কুমড়া-বেগুনের আদি জাত।”

তিনি আরও বলেন, ‘গরিব মানুষের কাছে মাটি, নদী, বৃক্ষ, বন্যপ্রাণ পবিত্র সত্তা। এই মানুষগুলো পরিবেশকে নিজের সম্পত্তি মনে করেন না। পরিবেশ দখল, বেচাবিক্রি, খুন-ধর্ষণ, রক্তাক্ত করে মুনাফাখোর কিছু লুটেরা প্রবৃত্তির বিলাসী মানুষ এমনটা মনে করে। এরজন্য আমাদের প্রবল এথনোসেন্ট্রিক মানে মানুষকেন্দ্রিক চিন্তা পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ দায়ী। এটা মাথায় রাখতে হবে কেবল গাছ লাগালেই পরিবেশ রক্ষা হয় না।”