‘গুমের দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে’

16
Spread the love

০ খবর বিজ্ঞপ্তি

গুম একটি মানবতা বিরোধী অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনেও এটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ: দেশে গুমের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা গুমের শিকার হচ্ছেন বেশি। অথচ : গুম হওয়া ব্যক্তিদের কোন সন্ধান বা তাদের লাশও পাওয়া যাচ্ছে না। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে গুম, অপহরণ বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ কোন ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘণ মেনে নেয়া যায়না। ধরণের অপরাধের দায় রাষ্ট্র কখনই এড়াতে পারে না। অবিলম্বে গুমের শিকার সকল নাগরিককে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) খুলনায় অনুষ্ঠিত র‌্যালী মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘মায়ের ডাক’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক’ খুলনা যৌথভাবে কর্মসূচির আয়োজন করে। বেলা ১১ টায় ফুল মার্কেট মোড় থেকে র‌্যালী বের হয়ে শান্তিধাম মোড় হয়ে জাতিসংঘ পার্কের সামনে গিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচী পরিচালনা সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান।

বক্তৃতা করেন খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, খুলনা প্রেস ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলা শাখার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস.এম সোহরাব হোসেন, গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, নিরাপদ সড়ক চাই- নিসচা’খুলনা জেলা সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, পরিবেশ সংগঠন ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট শেখ আলমগীর আশরাফ শেখ আব্দুল হালিম।

বক্তৃতায় আরও অংশ নেন ২০১৬ সালের আগস্ট সাতক্ষীরা থেকে গুম হওয়া হোমিও চিকিৎসক শেখ মোখলেছুর রহমান জনি’পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ, একই বছরের আগস্ট যশোরের বেনাপোল থেকে গুম হওয়া কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপন হোসেন এবং ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই পুলিশ কর্তৃক দু’ চোখ উপড়ানো খুলনা মহানগরের গোয়ালখালী রেললাইন এলাকার যুবক মো. শাহজালাল, তার পিতা মো. জাকির হোসেন স্ত্রী রাহেলা বেগম।

বক্তব্যে বৃদ্ধ পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ তার ছেলে শেখ মোখলেছুর রহমান জনিকে এবং  রিপন হোসেন তার ভাই মো. রেজোয়ান হোসেনকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। একই সঙ্গে শাহজালাল তার দুই চোখ ফেরত চেয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা আরও বলেন, এই সপ্তাহটি এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। গুমের পাশাপাশি চলছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- , বিনাবিচারে আটক, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা। রাষ্ট্র কর্তৃক দায়মুক্তির সুযোগে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিরাও নির্যাতন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডেরও শিকার হচ্ছেন গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী-সন্তানরা আর্থিক সামাজিকভাবে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’অধিকার’তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫৯৮ জন গুমের শিকার হয়েছেন।

কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফারুক, সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার  মোঃ জামাল হোসেন, এম আজিম, মোহাম্মদ আলী বাবু, মো. তামিম হাসান, মো. সাকিব হাসান (অগ্রগতি), মোঃ শহিদুল ইসলাম গাজী, মো. শহিদুল ইসলাম, মোঃ রাসেল, মোহাম্মদ সোলায়মান খান, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, মোঃ মুরাদ বিশ্বাস, মো. সাকিব হাসান, মোহাম্মদ ইমরান, নাঈম ইসলাম, মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ নাজমুল হোসেন, মোহাম্মদ বেনজির হোসেন, মোঃ আফজাল হোসেন রাজু প্রমুখ।

সভায় বক্তারা এখনই গুম বন্ধে সরকারের প্রতি আহবান জানান। একই সঙ্গে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্তরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। এছাড়া গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের পাশে থেকে সোচ্চার হয়ে গুম প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের প্রতি জোর দেন।