বাগেরহাট প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া নদ-নদীর পানিতে বাগেরহাটের অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। ভেসেগেছে দুই সহস্রাধিক মৎস্য ঘের। শোবার ঘর, রান্নাঘর, বাড়ির সামনে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কারও কারও রান্নাও বন্ধ রয়েছে। পানিবন্ধি এসব মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন।
শরনখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামের মোঃ ইদ্রিস খলিফা, নেয়ামুল জমাদ্দারসহ কয়েকজন বলেন, রাতেও বুঝতে পারনি এত পানি হবে। সকাল ৮টার দিকে হটাৎ পানি এসে আমাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়। সবাইকে নিয়ে রাস্তাার পাশে আশ্রয় নিয়েছি। ভাটিতে পানি কমলে বাড়ি যাব। না হয় রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে।
শরণখোলা গ্রামের মোঃ আবুল কালাম শিকদার বলেন, রাতের বৃষ্টির সাথে সাথে ভোলানদীর পানি বৃষ্টি পায়। সকালের জোয়ারে বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে। শুধু পানি নয় ঢেউয়ে ঘরের পোতাও নষ্ট হয়ে গেছে।
চরগ্রামের জলিল গুরু ও সাইদুল শিকদার বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিটি ঝড়েই আমাদের ডুবতে হয়। মূল্যবান মালামাল নষ্ট হয়। হাসমুরগী মারা যায়। সকালের হঠাৎ পানিতে চরগ্রামের সবার বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মুন্সি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আশপাশের পাঁচটি গ্রামের অন্তত ৩ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। অনেকের রান্না বান্নাও বন্দ রয়েছে। নদীর পাশে বাড়ি হওয়াটাই আমাদের কাল হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার কেয়ার বাজার থেকে সন্নাসী বাজারে যাওয়ার পিচঢালা রাস্তাটির দুই জায়গা ভেঙ্গে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নদীর তীরবর্তী মোড়েলগঞ্জ পৌর সদর, বারইখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া ,পুটিখালী,বলইবুনিয়া ইউনিয়ন। এসব এলাকার অধিকাংশ রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ডুবে গেছে শত শত মৎস্য ঘের। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়েছ। স্থানীয় মানুষের অন্তত দের-দুই হাজার মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। চাষীদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে।
মোংলা উপজেলার কানাইনগর এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, কানাইনগর, কাটাকাল, জয়মনিরঘোলসহ কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে৷ এসব গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব হোসেন রতন বলেন, জোয়ারের পানিতে মাঝিডাংগাসহ আশপাশের শতাধিক পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের বৃদ্ধি পাওয়া পানিতে শরণখোলা উপজেলার কিছু মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করবেন। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান লিখে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, ইয়াসের প্রভাবে বাগেরহাটে তেমন কোন ঝড় হয়নি। তবে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। আমরা পানিবন্ধি মানুষদের মাঝে শুকনো কাবার বিতরণ করেছি। ইয়াসের প্রভাব না কাটা পর্যন্ত আমরা সতর্ক অবস্থায় থাকব।