মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসন ও কোস্টগার্ড’র ব্যাপক প্রস্তুতি
০ মোংলা প্রতিনিধি
মোংলা বন্দরসহ সংলগ্ন সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি এখনও পর্যন্ত। তবে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার কারণে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ার সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এর আগে রবিবার রাতে এ এলাকার উপর দিয়ে হালকা-মাঝারি ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেলেও কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। সোমবার সকাল থেকে রোদ্রজ্জল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এনিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন পৃথক প্রস্তুতি সভা করেছেন। দুর্যোগ মোকাবেলা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বন্দর, পৌরসভা ও উপজেলার পক্ষ থেকে। এছাড়া নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড পৃথক সভা শেষে সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন। বর্তমানে ঘূণিঝড়টি মোংলা বন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
তবে ঝড় নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভীতিও রয়েছে। কিন্তু এবার বেশ আগেভাগে থেকে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচারণার সুযোগ পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সাধারণ লোকজন বলছেন, ভয় তো আছেই, করবো কি আমাদের তো কাঁচা ঘর, ঝড় আসলে মসজিদে ও বিল্ডিংয়ে যেতে হবে। তবে এবারের প্রশাসনের প্রস্তুতিও বেশ ভাল বলছেন স্থানীয় জনসাধারণ। মোংলায় এবার মোট ১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছেন। এছাড়াও এখানকার ব্যক্তি মালিকানা, সরকারী-বেসরকারী বহুতল পাকা ভবনও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র পরিস্কার করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে আগতদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, শুকনা খাবার মজুদ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে কানাইনগর, চিলা ও জয়মনি এলাকায় সার্বক্ষনিক নজরদারী রাখা হচ্ছে। দুর্যোগকে ঘিরে প্রায় ১৪শ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ: রহমান বলেন, পৌর এলাকায় ৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা লোকজনের মাঝে খিচুড়িসহ শুকনো খাবার বিতরণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার দুপুরে বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বন্দরের বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মো: মুসা বলেন, বন্দরে বর্তমানে ১১টি বিদেশী জাহাজ অবস্থান করছে সেগুলো সতর্ক করা হয়েছে। সেগুলো পণ্য ওঠানামার কাজ চলছে। সর্তক বার্তা যখন ৪ নম্বর হবে তখন কাজ বন্ধ করে জাহাজগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হবে। এছাড়া বন্দর চ্যানেলে অন্যান্য যে কার্গো, কোস্টার, বার্জ, ট্যাংকারসহ নৌযান রয়েছে সেগুলো এখান থেকে সরিয়ে খুলনার রুপসা ব্রিজ সংলগ্ন নদীতে নিরাপদে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলাসহ মেডিকেল টিক প্রস্তুত করা হয়েছে। বন্দর এলাকা ও আশপাশের দরিদ্র মানুষের আশ্রয়ের জন্য বন্দর স্কুল এন্ড কলেজটিকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে যারা আসবেন তাদের খাদ্যসহ সকল সহায়তা দেয়া হবে বন্দরের পক্ষ থেকে। এছাড়া বন্দরের নিজস্ব জলযান, জেটির মালামাল ও যন্ত্রপাতি শক্ত করে বেঁধে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জে কোস্ট গার্ডের অস্থায়ী কন্টিনজেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডের সকল অপারেশন বোট উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সাথে উদ্ধার তৎপরতার জন্য ১টি ভলগেট ও ১০টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোটও ভাড়া করেছে কোস্ট গার্ড। মোংলা ও মুন্সিগঞ্জে একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূণির্ঝড় পরবর্তী উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণের জন্য সমুদ্রে বিসিজিএস মনসুর আলী, কয়রা এলাকার জন্য বিসিজিএস স্বাধীন বাংলা, গাবুরা এলাকার জন্য বিসিজিএস তামজীদ ও নলিয়ান এলাকার জন্য এইচপিবি গড়াই প্রস্তুত রেখেছে কোস্ট গার্ড। এছাড়াও নৌবাহিনী ও বর্ডার গার্ডও অনুরুপ প্রস্তুতি এবং কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।