খুলনায় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু

3
Spread the love

আসাদ, দিঘলিয়া

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কাজ শুরু হয়েছে খুলনার ভৈরব নদের ওপর দিঘলিয়া-দৌলতপুর সংযোগ সেতুর। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়।

২৫ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্যদিয়ে সোমবার (২৪ মে) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বহু আকাঙ্ক্ষিত ভৈরব সেতুর কর্মযজ্ঞ।

সেতুর পূর্ব পাশ দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন ঈদগায়ের মধ্যে ২৫ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাশন লিমিটেড (করিম গ্রুপ)

সেতুটি নির্মাণ হলে দিঘলিয়া উপজেলার সঙ্গে খুলনা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। সেইসঙ্গে নদী পারাপারের দুর্ভোগও লাঘব হবে।

টেস্ট পাইলিং কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ-মো. বেলায়েত হোসেন, উপ- সহকারী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ-মো. রাশিদুর রেজা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেডের (করিম গ্রুপ) প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার হালদারসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা। 

এর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফা প্রস্তুতি নিয়েও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শুরু করতে পারেনি।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক জনপদ বিভাগ (সওজ) এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার সভায় ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিমিটেড (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেজ ক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ড তৈরি করে সেতুর ইকুইপমেন্ট স্টক করতে শুরু করে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, কেডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং সেতুর এলাইমেন্ট (লে আউট) না পাওয়ার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও সেতুর তৈরির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০টি। এর মধ্যে নদীর পশ্চিম পাশে অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত থেকে ১৪ নম্বর পিলার বসবে। অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্ক্ষা পাট গোডাউনের কর্নারে। এবং নম্বর পিলারের মাঝখান দিয়ে রেল লাইন ক্রস করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে এবং নম্বর পিলার বসবে। থেকে ১৩ নম্বর এই ৫টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেডের অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নম্বর পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগর ঘাট এবং বানিয়াঘাট ফেরিঘাট সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কাছে কুকুরমারা পর্যন্ত। পশ্চিম পাশের নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নম্বর পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নম্বর পিলার বসবে। এছাড়া নদীর উভয় দিকে যেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে এ-এবং ‍এ-দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোনো পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নম্বর পিলারের ওপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর ওপর মূল সেতুটি। নেভিগেশনের জন্য নদী দিয়ে যাতে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল সেতুর স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে। কুকুরমারা থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৩ ফুট চওড়া অ্যাপ্রোচ রোড হবে। এছাড়া খুলনা যশোর রোড থেকে সেতুতে ওঠার জন্য নগরীর মহসিন মোড়ে একটি ইন্টারসেকশন বা (জংশন) তৈরি করা হবে।

ভৈরব সেতু প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া-গাজিরহাট তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিলোমিটার ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার ১৭ দশমিক ৪৯ একর দশমিক ০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে।