আবারও আউশে আশা

1
Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি

তিন বছর আগে দেশে ১০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হতো। দুই বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর আরও এক লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত মৌসুমে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে তা এক লাফে দুই লাখ হেক্টর বেড়ে যায়। চলতি মৌসুমে (২০২১-২২) আউশ আবাদ হচ্ছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলে আউশ ধানের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত দুই মৌসুম আউশের আবাদ উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে সরকারের কৃষিবান্ধব নানামুখী উদ্যোগ। যার মধ্যে অন্যতম প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আউশ বীজ সার বিতরণ। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং কৃষকদের মধ্যে আউশ আবাদের সুফল যথাযথভাবে তুলে ধরার কারণে এর আবাদ উৎপাদন বেড়েছে। ফলে সর্বশেষ বোরোর মতো আউশেরও বাম্পার উৎপাদনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, চলতি আউশ মৌসুমে (২০২১-২২) ফসলি জমির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার টন, যা গত মৌসুমে ছিল ৩৪ লাখ ৫১ হাজার টন। ফসলি জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছর ১০ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবাদ হয় লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছয় লাখ পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আউশ ধান আবাদ হয় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ দেশে প্রতি অর্থবছরই ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে আউশের আবাদ।

আবাদ বাড়াতে সরকারি পদক্ষেপ

আউশের আবাদ বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সারাদেশের প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। চলতি বছর আবাদ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে পর্যন্ত চার লাখ ৫০ হাজার প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে বীজ সার সরবরাহ করেছে সরকার।

এছাড়া মৌলভীবাজারের পতিত জমিও চাষের আওতায় আনতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে তিন হাজার কৃষকের মাঝে ১৫ টনের বেশি আউশ বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকার আউশের আবাদ বাড়াতে চায়। জন্য যা যা করণীয়, করতে প্রস্তুত মন্ত্রণালয়। আউশ আবাদ বাড়াতে চলতি মৌসুম থেকে আরও বেশি প্রান্তিক কৃষককে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার কাজ করছে মন্ত্রণালয় কৃষি অধিদফতর।

কৃষকদের আগ্রহী করতে যা করছে মন্ত্রণালয়

আউশ আবাদে সেচ কম লাগে। সার পরিচর্যা খরচও কম। স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এই কথাগুলো মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কাজ করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠকর্মীরা। ধান উৎপাদনে পরিচিত জেলাগুলোসহ সারাদেশে আউশ আবাদ জনপ্রিয় করতে কৃষকের কাছাকাছি কর্মকর্তাদের পৌঁছাতে তৎপর মন্ত্রণালয়।

আউশ মৌসুমকে সামনে রেখে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা। প্রণোদনার মধ্যে থাকছে উচ্চ ফলনশীল জাতের আউশ বীজ, সার। আউশ আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ নিবিড় মনিটরিং। ফলে সেচসাশ্রয়ী আউশ আবাদে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন কৃষকরা। যার সুফল পাচ্ছে পুরো দেশ।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘দু-তিন বছর ধরে আমরা বৃষ্টিনির্ভর আউশ চাষে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় কম। আমরা বীজ-সার প্রান্তিক কৃষকদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছি। কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ পেয়ে খুশি। কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।’

প্রান্তিক কৃষকরা যা বলছেন

বিনামূল্যে সার বীজ পাওয়ার কারণে আউশে আগ্রহ বেড়েছে প্রান্তিক কৃষকদের। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষক লিয়াকত মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরে টানা আউশ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন তিনি। এবারও তিনি বেশ কয়েক বিঘা জমিতে আউশ আবাদ চাষ করেছেন। কিছুদিন আগে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে খরিপ-মৌসুমের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উফশী আউশের বীজ পেয়েছেন। আবাদের জন্য সারও পেয়েছেন বিনামূল্যে। এখন বৃষ্টির আশায় আছেন লিয়াকত।

জেলার দুঁপচাচিয়ার জিয়ানগরের কৃষক ফরিদ বলেন, ‘আউশে সেচ কম লাগে। খরচও একেবারে কম। কারণে আউশ আবাদ করছি। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারাও আউশ চাষের জন্য পরামর্শ দেন। সময়মতো আউশ আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।’