০ ঢাকা অফিস
‘তথ্য চুরির’ অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে মঙ্গলবার (১৮ মে) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২০ মে) তার জামিন আবেদনের শুনানি হবে। রোজিনার একমাত্র মেয়ের বয়স ৮ বছর। মাকে ছাড়া মেয়ে কী করছে জানতে চাইলে রোজিনা ইসলামের মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘মেয়ের কাছ থেকে রোজিনা দুই দিনের সময় চেয়ে নিয়েছে। সে ফোনে আমাকে বলেছে যে, আমি যেন মেয়েকে বলি— মা দুই দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছে। মেয়ে যেন নানুর সঙ্গে, সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে।’
রোজিনা ইসলামের মা তাসলিমা বেগম জানান, গতকালই (সোমবার, ১৭ মে) তিনি রোজিনার বাসায় এসেছেন। ইচ্ছে ছিল রাতেই নিজের বাসায় ফিরে যাবেন। কিন্তু তা আর হয়নি।
তাসলিমা বেগম জানান, সোমবার রোজিনা এবং তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু করোনার টিকা নেওয়ার জন্য সচিবালয়ে যায়। সেজন্য তিনি তার ছেলের দুই সন্তানকে নিয়ে সকালেই রোজিনার বাসায় আসেন। রোজিনার মেয়ের সঙ্গে বাসায় থাকার জন্য। ইচ্ছে ছিল রাতে তারা বাসায় ফিরলে তিনি নিজের বাসায় ফিরে যাবেন।
কিন্তু বিকাল চারটা থেকেই সবকিছু এলোমেলো যায় তাদের।
‘‘সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়েটা (রোজিনা ইসলাম) বলে গেলো— টিকা দিয়ে বাসায় ফিরে আসবে। ওরা হাজবেন্ড-ওয়াইফ গেলো। টিকা দেওয়ার পর মিঠু (রোজিনা ইসলামের স্বামী) নাকি বাসায় নামিয়ে দিতেও চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটা নাকি তাকে বলেছিল— ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটু ঘুরে যাই।’ বিকাল চারটার পরে আমরা সবকিছু জানতে পারলাম’’, বলেন তাসলিমা বেগম।
তিনি বলেন, রোজিনার মেয়েকে ভুলিয়ে রাখছেন তারা। টেলিভিশন দেখা বা মোবাইল হাতে নিতে দিচ্ছেন না। তারা চান না, এই বয়সেই যে সাহসী সাংবাদিক মাকে নিয়ে গর্ব করতো ছোট্ট মেয়েটি, সে তার মায়ের কান্নার দৃশ্য দেখুক, দেখুক চারপাশে পুলিশ দিয়ে ঘেরাও হয়ে আছে তার মা।
তাসলিমা বেগম জানান, আজ (বুধবার) রোজিনা ইসলাম তার স্বামীর ফোন থেকে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়েকে জানিয়েছে, মা দুই দিনের জন্য বাসার বাইরে থাকবে।
রোজিনার মা বলেন, ওর মা ওকে জানিয়েছে, ‘দুই দিনের জন্য আমি বাইরে যাচ্ছি। আমি চলে আসবো, তুমি নানুদের সঙ্গে থাকো।’
রোজিনা ইসলামের ভাই মো. সেলিম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা রোজিনার মেয়েকে কিছুই জানতে দেননি।
দেখি, কতদিন গোপন রাখা যায়, ওকে (রোজিনা) আনার আগ পর্যন্ত’, বলেন তিনি।
তারা সবাই এই মুহূর্তে রোজিনার বাসায় অবস্থান করছেন জানিয়ে সেলিম বলেন, কোর্টে তার আরেক বোনের সঙ্গে রোজিনার সঙ্গে কথা হয়েছে। স্বামীর ফোন দিয়ে মেয়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
আপনারা আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে ওকে আগে বের করে আনা।
মামলা করার বিষয়টিও মাথায় রয়েছে। তবে সবার আগে ওকে বের করে আনতে হবে। তারপর আমরা পদক্ষেপ নেবো।’
উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়।
রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী বাদী এ মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা তথ্য পাচার মামলায় রোজিনা ইসলামকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সিএমএম আদালতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে তাকে আদালতে তোলা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন। রোজিনা ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে তার আইনজীবী এহসানুল হক সামাজী রিমান্ডের আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন চান।
চিফ জুডিশিয়াল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জসিম সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নাকচ করেন এবং আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মে) জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। এই দুই দিন তাকে কারাগারেই থাকতে হবে। বিচারকের আদেশ পাওয়ার পর সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় তাকে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।