০ ঢাকা অফিস
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান মুনিয়া। তার বয়স ছিলো ২১। বলা হয়েছিলো যে, মুনিয়া একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। যদিও সেই কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, মুনিয়া আসলে ওই কলেজের ছাত্রী ছিলেন না। মুনিয়ার মৃত্যুর পর তার বোন নুসরাত তানিয়া গুলশান থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছিলো।
২৭ এপ্রিল ভোররাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলাটি দায়ের করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে তদন্ত করতে যেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছে যে, আত্মহত্যা প্ররোচনার কোনো প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে না। বরং এই মামলাটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তদন্তে ক্রমশ তা বেরিয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তারা এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপাের্ট দেবে। একটি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার জন্য প্রমাণ হিসেবে যে তথ্য-উপাত্ত লাগে সেটি নিয়েই প্রায় এক মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা। এই তদন্তে তারা যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে,
১. টেলিফোনে হুঁমকি:
একই মামলার এজাহারে বাদী নুসরাত তানিয়া অভিযোগ করেছে যে ২৩ এপ্রিল মুনিয়াকে টেলিফোন করে এজাহারে অভিযুক্ত বসুন্ধরার এমডি হুমকি দিয়েছে। কিন্তু টেলিফোনের এই হুমকির যে তথ্য, সেটির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। দেখা যাচ্ছে যে, ওই সময়ে এরকম কোনো টেলিফোন করে হুমকি দেয়া হয়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধারনা করছে যে, এটি সম্ভবত পুরোনো অথবা সম্পাদিত। তাছাড়া টেলিফোনটি আদৌও করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল যদি ফোন করা হয়, তাহলেও আত্মহত্যার প্ররোচনা হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ এটিই শেষ টেলিফোন নয়। বরং শেষ টেলিফোনটি মুনিয়া করেছে তার বোন নুসরাতকে।
২. সিসিটিভি ফুটেজ:
এই আত্মহত্যার প্ররোচনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখতে চেয়েছিলো যে, মুনিয়ার ফ্ল্যাটে কারা গিয়েছিলো এবং একাধিক সূত্র বলছে যে, এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ওই এক মাসে কথিত আসামি একবারো ওই ফ্ল্যাটে যায়নি। অর্থাৎ আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য যে প্রমাণ দরকার, যে মুনিয়ার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক ছিলো এবং মুনিয়ার ফ্ল্যাটে ওই ব্যক্তি নিয়মিত যেতেন, এমন কোনো তথ্য প্রমাণও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পায়নি বলে জানা গেছে।
৩. আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় যে ডেথ নোট থাকে সেই ডেথ নোটও নেই:
যেকোনো আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে বড় উপজীব্য বিষয় হলো ডেথ নোট। মৃত্যুর আগে আত্মহত্যা করার কারণ সম্বলিত একটি ডেথ নোট লেখেন আত্মহত্যাকারী। সেটিকে আত্মহত্যা প্ররোচনার বড় তথ্য-উপাত্ত এবং প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় মুনিয়ার এরকম কোনো ডেথ নোট নেই। তার যে ডায়েরিটি লেখা হয়েছে সেই ডায়েরিতেও মুনিয়াকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এই পুরো ডাইরির মধ্যে মুনিয়ার আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, এই ডাইরিটি দেখলে বোঝা যায় যে, দীর্ঘদিন ধরেই মুনিয়ার সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিলো না বসুন্ধরার এমডির। আর এই সমস্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ক্রমশ নিশ্চিত হচ্ছে যে, মুনিয়ার আত্মহত্যায় কোনো প্ররোচনার বিষয় ছিলো না। বরং এই আত্মহত্যায় অন্য কোনো ব্যক্তির হাত বা মদদ আছে কিনা সেটি খুঁজে দেখা হচ্ছে।