০ আনোয়ার আলদীন
রসালো ফলের মৌতাতে উতলা এখন প্রকৃতি। চারদিক এখন পাকা ফলের সৌরভে মাতোয়ারা। সুবাসিত আবেশ। আজ শুরু মিষ্টি ফলের রসে টইটম্বুর মধুমাস। আজ পয়লা জ্যৈষ্ঠ। গাছে গাছে এখন পুরুষ্টু কাঁঠালের বর্ণাঢ্য বিভা। গাঢ় সবুজ আমের শরীরে সিঁদুরের ছোপ। পেকে ওঠা লিচুগাছ ঘিরে দিনে পাখি আর রাতে বাদুড়ের কোলাহল।
পাকা জামের মধুর রসে মুখ রঙিন করার স্বপ্নের দোলা। জাম-জামরুল-লিচু, আনারস, করমচা, আতা, তরমুজ, ফুটি, বাঙ্গি, বেল, খেজুর, কাঁচা তাল, জাম্বুরা, কাউফল, গোলাপজাম, কামরাঙা, লটকনসহ হরেক ফলের স্বাদ আর রঙের ছোঁয়ায় বাঙালির রসনা তৃপ্তির মৌসুম। বাহারি আর পুষ্টিকর সব ফলের প্রাচুর্য এই মৌসুমকে দিয়েছে মধুমাসের মহিমা।
বাঙালির মধুমাস জ্যৈষ্ঠ আসার আগেই রস টসটস বর্ণিল রঙের ফলে ছেয়ে গেছে বাজারগুলো। গ্রামের হাটবাজারে এখন মিষ্টি ফলের সুবাস। গ্রামের মতো শহরে ফলের দোকান সাজিয়ে বসেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে এরই মধ্যে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে মধুমাসের নানা জাতের ফল। ফলের ম ম ঘ্রাণে ভরে উঠেছে ফলের আড়তগুলো। কোথাও কোথাও মৌসুমি ফলের মেলা বসবে।
সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নাটোর, ঈশ্বরদী থেকে গুটি আম, মোহনভোগ, গোপালভোগসহ বাহারি নামে বিভিন্ন আমে বাজার সয়লাব। ভারতীয় গুটি আম গোবিন্দভোগ, হিমসাগর পাওয়া যাচ্ছে বৈশাখের শুরু থেকেই।এ ছাড়া রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ মধুমাসকে পরিপূর্ণ করবে। আর এর পরই আসবে সে অঞ্চলের ফজলি আম। গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, রানীভোগ, ফজলি, আশ্বিনা ছাড়াও এখন বাংলাদেশে নতুন জাতের আম ফলছে। যেমন—আম্রপালি, সোনালি, হাঁড়িভাঙ্গা, সূর্যপূরী, কাঁচামিঠা ইত্যাদি।
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। ছোট-বড় নানা ধরনের কাঁঠাল বিকিকিনি হতে দেখা যাবে বাজারে। কাঁঠাল এমন একটি ফল যা কাঁচা-পাকা দুটি অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালকে এচোড় বলা হয়। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। কেউ আম খেতে ভালোবাসে, কেউ আবার কাঁঠাল।
মধুমাস জ্যৈষ্ঠ নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা-গান। তবে মধুমাস এলেই মনে পড়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের সেই আলোড়িত পদ্যটি—‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে যাই/ফুলের মালা গলায় দিয়ে/মামার বাড়ি যাই/মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে/আম কুড়াতে সুখ/পাকা জামের মধুর রসে/রঙিন করি মুখ।’
প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় ও নির্দেশনা মেনেই গাছ থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে রাজশাহী শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার বাগান থেকে পরিপক্ব আম ভাঙা হচ্ছে। তবে, আজ নামছে কেবল গুটি জাতের আম। রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম।
জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে এই আমটি নামাতে পারছেন চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, ‘গুটি আম প্রতি বছরই একটু আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকেই আজ গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। তবে আঁশযুক্ত এই আমের স্বাদ তুলনামূলক কম।’
এদিকে পরিপক্ব হওয়ার আগেই কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে ফরমালিন যুক্ত কিছু কিছু ফল বাজারে আসছে। এসব অপরিপক্ব ফল কর্তন করে বাজারে বিক্রি করছেন অধিক মুনাফা লোভী কিছু খামারি। আগাম বাজারে আসা ফলের দাম অধিক পাওয়া গেলেও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। আবার কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করে বাগানেই বিষাক্ত ইথিলিন দিয়ে পাকানো হয়। বাজারে আজকাল যেসব ফল পাওয়া যায় তার অধিকাংশ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো হয়। এসব খেলে স্বাস্থ্যের খুব ক্ষতি হয়। চকচকে ফল যা দেখতে ভারি সুন্দর তা না কেনাই ভালো। তাই দেখে-শুনে ফল কিনে খাওয়া উচিত। সবাই সচেতন হলে এ বিষমুক্তি সম্ভব।