শঙ্কা মাথায় এলো খুশি

2
Spread the love

0 বিশেষ প্রতিনিধি

করোনা মহামারীর মধ্যে এলো আরও একটি ঈদ। তবে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর হচ্ছে- কয়েক মাস ধরে দেশে করোনার যে ভয়াবহ প্রকোপ ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। অন্যদিকে উদ্বেগ শঙ্কার খবর হচ্ছে- করোনার উচ্চ সংক্রমণশীল ভারতীয় ধরন বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আসন্ন ঈদ ঘিরে কেনাকাটায় প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যস্ততায় এবং ঘরমুখো জনস্রোতে বিপুলসংখ্যক মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলেছেন, তাতে ঈদের পর দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ছাড়া গ্রামেও করোনার ব্যাপক বিস্তারের শঙ্কা রয়েছে। এর পরও মানুষ ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আজ বুধবার দিনশেষে অসংখ্য মানুষের উৎসুক চোখ থাকবে পশ্চিম আকাশে; খুঁজে ফিরবে ঈদের চাঁদ। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিও আজ সন্ধ্যায় বৈঠক ডেকেছে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার তথ্য পর্যালোচনায়। যদি আজ সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়, তা হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। নইলে পর দিন শুক্রবার ঈদ। সে ক্ষেত্রে রোজা হবে ৩০টি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে ঈদের পর করোনা পরিস্থিতি ভারত নেপালের মতো ভয়াবহ হতে পারে বলে এক সভায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলাফেরা করার কথা। এর সঙ্গে একমত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তাদেরও শঙ্কা, ঈদের পর করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এর পরও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পরিস্থিতি গতবারের মতো নয়। এবার কর্মব্যস্ত শহর গ্রাম। চলছে কেনাকাটা, ঈদের প্রস্তুতি। করোনাকালে গত বছরের ঈদুল ফিতর ঈদুল আজহা নিরানন্দে কেটেছে। মানুষের মনে ভয় ছিল, আতঙ্ক ছিল। এবার করোনার প্রকোপ থাকলেও মানুষের ভয় গেছে কমে; ঈদের আনন্দ পেতে দিতে উন্মুখ সবাই। মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও গতকাল চাঁদ দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে এবারও ৩০ রোজা শেষে শুক্রবার ঈদ উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আনন্দ আয়োজনে ঈদ উপযাপন করবে মানুষ। চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠবে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই চিত্ত আকুল করা গান- ‘মন রমজানের রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…।’ গানের সুরের সঙ্গে আমাদের ঈদের আনন্দ একাত্ম হয়ে আছে। ঈদের জন্য তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে আজ। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন; কামনা করেছেন বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি কল্যাণ। মহামারীর কারণে সারাদেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ চলছে এপ্রিল মাস থেকে। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদযাত্রার মধ্য দিয়ে ভাইরাস যাতে না ছড়ায় সে জন্য সবাইকে যার যার কর্মস্থলের এলাকায় ঈদ করতে বলা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। তার পরও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের পথে ছুটছেন। গত দুই ঈদের মতো এবার রোজার ঈদেও জামাত হবে কেবল মসজিদে, আর তাতে মুসল্লিদের অংশ নিতে হবে বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে। সবাইকে বাসা থেকে ওজু করে মাস্ক পরে মসজিদে যেতে হবে। প্রতিটি কাতার দাঁড়াবে স্বাস্থ্যসম্মত দূরত্ব রেখে। নামাজ শেষে কারও সঙ্গে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না। ঈদগাহ বা খোলা মাঠে ঈদের জামাত হবে না। সেই সঙ্গে মসজিদে ঈদ জামাত আয়োজনের ক্ষেত্রে সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বেশ কিছু শর্ত দিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব নির্দেশনা না মানলে ‘আইনগত ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।

গত বছর ২৫ মে ঈদুল ফিতর পালিত হয়। তখন প্রবল ছোঁয়াচে প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার রোধে সাধারণ ছুটির আড়ালে সারাদেশে কার্যত ছিল লকডাউন। তাই মানুষ ঘরবন্দি ঈদ উদযাপন করেছে। এবারও ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউন রয়েছে। কিন্তু নেই সেই জনচিত্র। যেন খুবই স্বাভাবিক বিষয়, স্বাভাবিক জীবনযাপনেরই অংশ- সবার আচরণ-চলাফেরায় তেমনটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

ঈদ কেন্দ্র করে রোজার শুরু থেকেই পরিবার, পাড়া-মহল্লা হাটবাজার থেকে যেসব চেনা গল্প, চেনা ছবি তৈরি হয়, তা এবার দেরিতে হলেও দেখা যাচ্ছে। রোজার শুরুতে নানা বিধিনিষেধের কারণে সব স্থবির থাকলেও এখন মোটামুটি সরগরম। ঈদের কেনাকাটা কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে যে চাঙ্গাভাব দেখা যায়, তা পুরনো রূপে না ফিরলেও গতবারের চেয়ে অনেকটা ভালো। এতেই সন্তুষ্ট বিক্রেতাদের অনেকে।

ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের আনন্দটা এবার দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন লঞ্চ বন্ধ। পায়ে হেঁটে, একাধিকবার বাহন পরিবর্তন করে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। দুর্ভোগ সঙ্গী করে শিমুলিয়া মাওয়াঘাটে মানুষের ঢল দেখে বোঝা যাচ্ছে ঘরমুখী মানুষ কতটা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। অন্যান্য রুটে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা ভাড়া গাড়ি এবং ট্রাকে করে মানুষ বাড়ি ফিরছেন।

যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, নামাজ, তারাবি, ইবাদত-বন্দেগি ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরস্কার হচ্ছে ঈদ। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা মতে, ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে।

পবিত্র রমজানে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ফিতরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দবার্তা নিয়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স) ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন।