0 খুলনাঞ্চল রিপোর্ট
শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার যাত্রাপথে দুই ফেরিতে প্রচণ্ড গরমে হুড়োহুড়িতে দম বন্ধ হয়ে এ পর্যন্ত পাঁচজন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়া শতাধিক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এসময় শতাধিক যাত্রীকে পদ্মায় লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচাতে দেখা যায়।
ফেরিটি শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছানোর পর গাড়ি নামার আগেই হাজার হাজার যাত্রী উঠে পড়ায় গাদাগাদি অবস্থাতেই ৩ ঘণ্টা ওই ঘাটে অবস্থান করে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া ঘাট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঢল নামে। প্রতিটি ফেরিই যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে পার হচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে সকাল থেকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে খালি ফেরি নিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। দুপুরে রো রো ফেরি এনায়েতপুরী বাংলাবাজার ঘাট থেকে ১৫টি যানবাহন নিয়ে শিমুলীয়া ঘাটে পৌঁছলে ফেরিটি যানবাহন ঘাটে নামানোর আগেই শিমুলীয়া ঘাট থেকে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী ফেরিতে উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর যাত্রীদের চাপে লোড করা যানবাহন শিমুলীয়া ঘাটে না নামিয়েই যাত্রী বোঝাই করে ফেরিটি আবার বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেরির মধ্যে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি ও প্রচণ্ড গরমে শতাধিক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফেরিটি বাংলাবাজার ৩ নম্বর ঘাটে আসার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক যাত্রী নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে গরম থেকে কোনোমতে বাঁচার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছলে অসুস্থ যাত্রীদের মধ্যে এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, অসুস্থ শতাধিক যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে। এর আগে রো রো ফেরি শাহ পরানে শরীয়তপুরের পালংয়ের আনসুর মাদবর (১৫) নামের এক কিশোর মারা যায়। আর রো রো ফেরি এনায়েতপুরীর যাত্রী মাদারীপুরের কালকিনির গোপালপুর ইউনিয়নের বালীগ্রাম এলাকার নিপা আক্তার (৩৫), বরিশালের হিজলা উপজেলার হারুন মিয়াসহ (৪৫) চারজন মারা গেছে।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহতদের পরিবার প্রতি জেলা প্রশাসক ২০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন।
ওই ফেরির যাত্রী হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘শিমুলিয়ায় হাজার হাজার যাত্রী ঘণ্টার পরা ঘন্টা আটকে ছিলাম। এই ফেরিটা যাওয়ার পর হাজার হাজার যাত্রী ফেরিতে উঠে পরে। ফেরির গাড়িগুলো আর নামতে পারে নাই। এইজন্য ৩ ঘণ্টার উপর ফেরিটা ঘাটে আটকে ছিল।পরে গাড়ি না নামিয়েই বাংলাবাজার ফিরে আসে।’
‘হাজার হাজার যাত্রী তার সাথে গাড়ির ভিড়ের গরমে মানুষ অস্থির হইয়া ছটফট করতে থাকে। এরসাথে হুড়োহুড়িতে আমার সামনেই শত শত মানুষ অসুস্থ হইয়া পরে। চারজন মারা গেলেও আরও অনেকে অসুস্থ’, যোগ করেন তিনি।
ঝালকাঠিগামী যাত্রী ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সদরঘাটের লঞ্চসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব রুট বন্ধ থাকায় এ রুটে সব যাত্রী আসছে। এই ফেরিতেও ৫ হাজারের বেশি লোক উঠে। আর কয়েক ঘণ্টা ঘাটে আটকে থাকায় হুড়োহুড়িতে গরমে যাত্রীরা ছটফট করছিল। দম বন্ধ হয়েই সবার মৃত্যু হয়েছে। অনেকে জীবন বাঁচাতে পদ্মায় লাফিয়েও পড়েছেন।’
ফেরি এনায়েতপুরির মাস্টার ইনচার্জ মো. রেজা মুঠোফোনে বলেন, ‘শিমুলিয়ায় যাত্রী চাপে আমরা বাংলাবাজার থেকে নেয়া গাড়িও নামাতে পারিনি। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেই গাড়ি নিয়েই ফিরে আসি। প্রচণ্ড গরমে এই ঘটনা ঘটেছে।’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘ফেরি এনায়েরপুরিতে ৪ যাত্রী ও ফেরি শাহ পরানে ১ যাত্রী মৃত্যুবরণ করেছে। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে এসকল যাত্রীরা মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়েছে।’