মাদকাসক্তিই কি মুনিয়ার আত্মহত্যার নেপথ্যের কারণ?

5
Spread the love

০খুলনাঞ্চল রিপোর্ট

গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা গেছেন কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া। মুনিয়ার পোস্টমর্টেম করা হয়েছে কিন্তু তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন কি না সংক্রান্ত কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি। অপরাধ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্রবণতা নিরুপণের জন্য তার মাদকাসক্তি পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে তিনটি প্রধান কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে। এর একটি কারণ হলো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। দুই, ব্যক্তিত্বের সমস্যা বা মানসিকতা এবং তিন, মাদকাসক্তি। তিনি এটাও বলেন যে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের নারীরা বেশি আত্মহত্যা প্রবণ হয় এবং এর একাধিক কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষের বিষন্নতা থেকে মাদকাসক্তির ওপর নির্ভরতা হয় এবং অ্যালকোহল, ইয়াবা ইত্যাদি আসক্তি তাকে একসময় মৃত্যুর দিকে উদ্বুদ্ধ করে।

আর এই বক্তব্যকে সামনে নিয়ে আমরা যদি মুনিয়ার ঘটনাটি বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখবো যে মুনিয়ার মধ্যে বিষন্নতা হয়েছিলো, ব্যক্তিত্বের সমস্যা হয়েছিলো, সে কারণে তিনি মাদকাসক্ত হয়েছিলেন কি না সেটি অবশ্যই তদন্তের বিষয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, আত্মহত্যার আগে যদি তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তাহলে ধরনের আত্মহত্যা করা খুবই সহজ। আর যদি তিনি মাদকাসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন তার ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্ররোচনা কোনোভাবেই প্রযোজ্য হবে না। কারণেই অপরাধ বিজ্ঞানীরা এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন যে মুনিয়ার বিষয়টি আরো সংবেদনশীলভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। দেখা দরকার যে কোন পরিস্থিতিতে কখন থেকে তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং মুনিয়ার সম্পর্কে যে সব তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, মুনিয়ার মাদকাসক্ত থাকার সম্ভবনা প্রবল। কারণ যে সমস্ত নাচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে, একজন সুস্থ তরুণীর পক্ষে এটি করা অসম্ভব। কাজেই তিনি যে অসংলগ্ন ছিলেন সেটি বলাই বাহুল্য। কেউ কেউ মনে করেন যে, তাকে তার বোন নুসরাত যেভাবে ব্যবহার করেছে, কারণে তার মধ্যে ব্যক্তিত্বের সমস্যা তৈরি হয়েছিলো এবং এই ব্যক্তিত্বের সমস্যা থেকে তার মধ্যে এক ধরনের বিষন্নতাও তৈরি হয়েছিলো। এই বিষন্নতা থেকে তিনি হয়তো মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে মাদকাসক্তির পরিমাণ বেশি ছিলো, যার কারণে তিনি হয়তো আত্মহত্যার পথে অনুপ্রাণিত হন।

পৃথিবীতে এরকম বহু ঘটনা আছে, যে রহস্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে পুনঃপরীক্ষা এবং পুনঃময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কাজেই মুনিয়ার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তাকে কি কেউ হত্যা করেছে, না তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন, আত্মহত্যা করলে তিনি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে করেছেন কি না? এসব প্রশ্নের উত্তরের একটি সঠিক সমাধান যেমন দরকার, তেমনি প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ করা দরকার। আর কারণেই মুনিয়া মাদকাসক্ত ছিলেন কি না, মাদক সেবন করতেন কি না, সেটিও পরীক্ষা করা খুব জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।