প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকায় এক পরিবারের সবার নাম!

6
Spread the love

০ মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুস্থ অসচ্ছল পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৫০০ টাকা উপহারের তালিকায় মণিরামপুরে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বরদের পাশাপাশি তালিকা করার কাজে অংশ নেওয়া দলীয় প্রতিনিধিরা অনিয়ম করেছেন সবচেয়ে বেশি।

এমন এক অনিয়মকারী খেদাপাড়া ইউপির মাহমুদকাটি গ্রামের ইসমাইল হোসেন। তিনি দলীয়ভাবে সাত নম্বর (মাহমুদকাটি-কদমবাড়িয়া) ওয়ার্ডে ১৭ জনের নাম দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১৭ জনের মধ্যে তিনি নিজ গোত্রের জনের নাম দিয়েছেন। যারমধ্যে রয়েছে নিজের পরিবারের সাত জনের নাম।

তারা হলেন, ইসমাইল হোসেন নিজে, তার স্ত্রী, কলেজ পড়ুয়া ছেলে রনি পারভেজ, অন্য এলাকায় ধনাঢ্য পরিবারে বিয়ে দেওয়া মেয়ে সাবিনা খাতুন, দুই ভাই গোলাম মোস্তফা আবু হানিফ এবং চাচাত ভাই হোসেন আলী, আবুল ইসলাম তার স্ত্রী রোজিনা বেগম।

এছাড়া ইসমাইল হোসেনের দলীয়ভাবে দেওয়া বাকি আটটি নামের ব্যাপারেও রয়েছে স্থানীয়দের আপত্তি।

এদিকে মাহমুদকাটি গ্রামে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে দলীয় প্রতিনিধি দাবি করে ৫০০ টাকার তালিকায় নিজের কলেজপড়ুয়া ছেলের নাম দিয়েছেন। এছাড়া আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতিরও অভিযোগ উঠেছে। তিনি সুযোগ পেয়ে নিজের পছন্দের সব নাম দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয়রা বলছেন, ইসমাইলের দেওয়া ১৭টি নামের মধ্যে দুস্থ অসচ্ছল কোন নাম স্থান পায়নি।

সাত নম্বর ( মাহমুদকাটি-কদমবাড়িয়া) ওয়ার্ডসহ খেদাপাড়া ইউনিয়নের ৫০০ টাকার পুরো তালিকা যাচাইবাছাইয়ের দাবি তাদের।

এই ব্যাপারে ইসমাইল হোসেন পরিবারের সবার নাম দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তালিকা সংক্রান্ত পরিষদে মিটিং-এর দিন ইউপি সচিব বলেছিলেন, আপনারা প্রতিনিধি হিসেবে কোন খরচ পাবেন না। নিজেদের দুই একটি নাম দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েন। সচিবের কথা শুনে আমি নামগুলো দিয়েছি। 

এই বিষয়ে খেদাপাড়া ইউপি সচিব মৃণালকান্তি বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বর বাদে দলীয় প্রতিনিধিদের যুক্ত করা হয়েছে তালিকা স্বচ্ছ করার জন্য। তারা যদি নিজেদের নাম দিয়ে অনিয়ম করেন। সেটা মানা যায় না।

খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, তালিকা তৈরিতে সরকারিভাবে দলীয় প্রতিনিধি নেওয়ার কথা উল্লেখ নেই। স্থানীয়চাপে তাদের দেওয়া নাম নিতে হয়। তারা অনিয়ম করলে কিছু করার থাকে না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিত বলেন, ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের ৪৫০ টাকা বাদেও ১৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৫০০ জনকে নগদ ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যান মেম্বরদের বলা হয়েছে দলীয় প্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকা যাচাই করে নেওয়ার জন্য। মাহমুদকাটি গ্রামের অভিযুক্ত নামগুলোর টাকা স্থগিত রাখতে খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান সচিবকে বলা হয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, খেদাপাড়া ইউনিয়নে ৫০০ টাকার তালিকায় অনিয়মের খবর পেয়েছি। টাকা বিতরণের সময় তালিকা যাচাই করতে চেয়ারম্যান সচিবকে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় করোনাকালীন কর্মহীন দুস্থদের দুই হাজার ৫০০ টাকা করে দিয়েছিলেন সরকার। সেবার খেদাপাড়া ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রতিনিধি হিসেবে তালিকা করার সুযোগ পেয়ে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুকুল হোসেন নিজের পরিবারের সবার নাম দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এবারের ঈদে মুকুলের পরিবর্তে তালিকা করার সুযোগ পেয়ে ইসমাইল হোসেনও সেই একই কাজ করেছেন। ইসমাইল হোসেন একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।