দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উৎপাদনের জন্য দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর কাছে প্রস্তাব করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবের বিপরীতে দেওয়া হয়েছিল পাঁচটি ইনডিকেটর তথা শর্ত। ওই শর্তের ওপর ভিত্তি করেই কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। আর তা মেনে নিয়ে এগিয়ে আসে তিনটি ওষুধ কোম্পানি।
কোম্পানি তিনটি হচ্ছে— ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে টিকা বিষয়ক কোর কমিটির বৃহস্পতিবারের (৬ মে) সিদ্ধান্তে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বাদ পড়ে যাবে বলে একটি সূত্র জানায়।
কী ছিল সেই ইনডিকেটর? জানতে চাইলে সূত্র জানায়, পাঁচটি ইন্ডিকেটর হলো—কত দ্রুত টিকা উৎপাদন করতে পারবে, কী পরিমাণ তৈরি করতে পারবে, টিকার মান কেমন হবে, কোম্পানির অভিজ্ঞতা আছে কিনা এবং তাদের জনবল ও অবকাঠামো কতটুকু রয়েছে।
কোভিড ১৯-এর ভ্যাকসিনের চাহিদা নিরূপণ, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা নির্বাচন, টিকা সংগ্রহ, বিতরণ ও দরকষাকষির মাধ্যমে টিকার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করার কথা রয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের টিকা বিষয়ক কমিটির।
টিকা বা ওষুধ তৈরির জন্য যখন অনুমতি চাওয়া হয় কোনও কোম্পানির পক্ষ থেকে, তখন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে সেই কোম্পানি পরিদর্শন করা হয়। একে বলা হয় গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি)। নির্দিষ্ট ওষুধ তৈরির ক্ষমতা কেমন রয়েছে, তা যাচাই করেই এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ৩ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে সভাপতি করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সদস্য সচিব করে গঠিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ বিতরণ বিষয়ক আন্তমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সভায় দেশের তিনটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই কোম্পানিগুলো টিকা তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে কেবল। টিকা উৎপাদনের জন্য এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
তবে টিকা উৎপাদনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত জানতে চাইলে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, এটা নিয়ে আমরা এখনও কথা বলতে পারবো না।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় ইনসেপটা ভ্যাকসিন লিমিটেডের ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন।
সেদিন ইনসেপটার ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ইনসেপটার ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট ইতোমধ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) মান অনুযায়ী ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিশ্বমানের সক্ষমতা অর্জন করেছে। সুতরাং, আমি মনে করি অন্য দেশগুলোও এই মহামারি পরিস্থিতি চলাকালে তাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য তাদের (ইনসেপটার) এই প্ল্যান্ট ব্যবহার করতে পারে। এটি আমাদের জন্য সত্যিই সুখবর যে, এই ভ্যাকসিন প্ল্যান্টটি প্রতি বছর ১৮ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষমতা রাখে।’
–ঢাকা অফিস