যশোরে লকডাউন উপেক্ষা করে পটল বাবু গং এর “পন্যমেলা”

3
Spread the love

করোনা মহামারির মধ্যে যেখানে সবকিছু থেমে আছে সেখানে পটল বাবু গং অনেকটা গায়ের জোরে প্রশাসনের অনুমতি ব্যাতিরেকে মাইক বাজিয়ে বেশ জোরেশোরেই চালাচ্ছে সস্তা বাজার নামের “পন্যমেলা”কোন প্রকার বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছে না এই মেলার পরিচালকেরা। যেখানে সকাল থেকে রাত ৮পর্যন্ত শপিংমল বাজার খোলা থাকার কথা থাকলেও রাত ১১টা নাগাদ চলছে এই পন্যমেলা। এখানেও থেমে থাকেনি তাদের মেলার কার্যক্রম। এখন মেলার বাইরের সড়ক দখল করে চলছে দোকান তৈরীর কাজ।

করোনাভাইরাস মহামারি আর লকডাউনের মধ্যে যশোর গাড়িখানাস্থ পুলিশ ক্লাব মাঠে চলছে অস্থায়ী সস্তা বাজারের নামে ‘পণ্যমেলা’ চালাতে পটল বাবু গং প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে চালাচ্ছে অনুমতিহীন মেলা। এক প্রকার বাতাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা চক্রটির ব্যাপারে প্রশাসন বরাবরই উদাসীন। অভিযোগ উঠছে প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার দিকেও। তার কারণ মেলাটি আরম্ব হয়েছে খোদ পুলিশ প্রশাসনের জায়গায়।

সূত্র বলছে, কৌশল হিসেবে ‘শিল্প-বাণিজ্য বা পণ্য মেলার’ পরিবর্তে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে ‘করোনাকালীন সংক্রমণ সতর্কতা অস্থায়ী বাজার’করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেই মেলার আয়োজন করে ‘সংক্রমণ সতর্কতার’ সাইনবোর্ড টাঙানোকেও অনেকেই হাস্যকর বলেও অভিহিত করেছেন। তাছাড়া জেলা প্রশাসন থেকেও এই মেলার কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র যশোরের বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে মধ্য এপ্রিলে লকডাউন শুরু হলে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সীমিত পরিসরে স্বাস্থবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি পাওয়া গেছে। যেখানে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন চলমান রয়েছে। এই অবস্থায় শহরের গাড়িখানা সড়কের পাশে ‘অস্থায়ী বাজারের’ নামে পণ্যমেলার আয়োজন করা হয়েছে। গত মে থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। এখানে প্যান্ট, শার্ট, থ্রিপিস, জুতা, অলঙ্কার-প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৩০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১৫টি স্টল স্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে। অবশ্য গত বছর একইস্থানে প্রায় ১০ মাস ধরে ধরণের মেলা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় পটল বাবু গং।

প্রসঙ্গে নাগরিক আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক মাস্টার নূর জালাল বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে এই ধরনের মেলার আয়োজন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’

তিনি অস্থায়ী বাজারের নামে এই মেলা আয়োজনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তা বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোরের বড়বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির একাধিক নেতা বলেন, ‘মেলার নামে গাড়িখানা সড়কের ওই অস্থায়ী বাজার প্রায় বছর জুড়েই চলে। গত বছর করোনা ছড়িয়ে পড়লে মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে আবারো তা চালু করে কয়েকমাস স্থায়ী ছিল। এই মেলার কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয়টি তারা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

যশোরের বড়বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতা ছিটকাপড় ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা জানান, এই মেলা নিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে অভিযোগ দেন। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, মেলা একমাস চলতে পারে। কিন্তু মাসব্যাপী মেলা বছর জুড়েই চলতে থাকে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

করোনাকালে এই অস্থায়ী বাজারের বিষয়ে যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘বড়বাজারসহ অধিকাংশ মার্কেটেই ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্কপরাসহ স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমত মানছেন না। ফলে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। গাড়িখানা সড়কের অস্থায়ী বাজারেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।’

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘গাড়িখানা সড়কের অস্থায়ী বাজার বা মেলার কোনো অনুমতি তারা দেননি। আর করোনা মহামারির সময়ে যখন কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তখন ধরণের মেলার আয়োজন সঙ্গত নয়। তারপরও কিভাবে এটি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’

 – কে এম রফিক, যশোর