করোনাভাইরাসের হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সরকার যখন লকডাউনসহ নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেই সুযোগে একদল মানুষ রেস্টুরেন্ট স্থাপনের নামে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্বিচারে একের পর এক গাছ কেটে চলছে। গত কয়েকদিন ধরে খোদ রাজধানীর বুকে বৃক্ষ হত্যার এই আয়োজন চলছে। অথচ এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর রমনা পার্ক কংক্রিটের এই শহরের ‘ফুসফুস’ বলে পরিচত।
একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবগুলো প্রশেবপথসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭টা রেস্টুরেন্ট স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের দাবি, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও রয়েছে।
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন; গাছ কেটেই কেন স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে? বিশ্বের বহু দেশে এখন প্রাণীর অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে গাছ না কেটে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কেন তা করছি না? এই শহরে যেখানে দিন দিন প্রকৃতিক অক্সিজেনের উৎস হারিয়ে যাচ্ছে, তখন কিছু মানুষের অবহেলা, অজ্ঞতা আর অপরিকল্পিত নির্মাণে আরও হুমকিতে পড়েছে আমাদের পরিবেশ।
এমন ঘটনা যে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ঘটছে তা নয়; পুরো দেশেই গাছ কেটে চলছে নির্মাণ কাজ। এ নিয়ে সরকারের নানান নির্দেশনা আছে; আছে পরিবেশ আইন। কিন্তু তারপরও থেমে নেই কিছু। বৃক্ষ নিধন চলছেই। আর আমরা আছি চোখ বন্ধ করে।
যদিও এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে ফেলার প্রতিবাদে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু গাছ কাটা বন্ধ হয়নি। নতুন করে আরও অনেক গাছের গায়ে ‘লাল চিহ্ন’ দেওয়া হয়েছে; যেগুলোও কাটা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আমাদের প্রশ্ন; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেআইপি) এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। সেখানে রেস্টুরেন্টের মতো অপ্রয়োজনীয় নির্মাণের জন্য এত এত প্রাচীন গাছ কেন কাটতে হবে। কেন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে হবে? বাস্তুসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলতে হবে?
আমরা মনে করি, দ্রুত এই রেষ্টুরেন্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করে বাকি গাছগুলোকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। আর এই কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।