ইলিশ ধরার উৎসব হলো শুরু

1
Spread the love

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের সব নদীতে শুরু হয়েছে ইলিশ ধরার উৎসব। দীর্ঘ ৬০ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে আবারও ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার শুরু হয়েছে। মা ইলিশের নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে সাগরের মোহনা ইলিশ চলাচলকারী নদ-নদীতে মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ছিল।

মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস জেলার ৫টি ইলিশ অভয়াশ্রমে যাবতীয় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর পটুয়াখালীর ইলিশ অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদী। আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দ-ের কথা বলা হয়েছিল।

দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস ১৯৮৫’ সংশোধন করে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ৬০ দিনে যে পাঁচটি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল সেগুলো হচ্ছে- ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার মদনপুর, চর ইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা।

প্রতিবছর মার্চ এপ্রিল, এই দুই মাস উল্লিখিত অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। সময় সংশ্লিষ্ট ছয়টি জেলার তালিকাভুক্ত লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৮ জন জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি হারে মোট ১৯ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল সহায়তা দেয় সরকার।

প্রসঙ্গে ভোলার লালমোহনের জেলে ফোরকান হোসেন জানান, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে জাল নিয়ে নদীতে নেমেছি। ইলিশ ধরা পড়লে স্ত্রী-সন্তানের মুখে ভাত দিতে পারবো। মহাজনের সুদের টাকাও শোধ হবে। তিনি জানান, এখন নদীতে বড় সাইজের ইলিশ আছে। জালে মাঝে মাঝে ধরা পড়ছে। তবে এটা ভাগ্যের ব্যাপার।’

বরগুনার পাথরঘাটার জেলে ইদ্রিস ফকির বললেন, ‘আমাদের জেলায় কয়েকটি নদীতে ইলিশসহ সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। জাল নিয়ে নামলেই প্রশাসন বাধা দিয়েছে। দুই মাস খুব কষ্টে ছিলাম। এখন যদি জালে ইলিশ ধরা পড়ে তবে কষ্ট থাকবে না।’

চাঁদপুরের জেলে মোকাররম হোসেন জানিয়েছেন, ‘আমরা জাটকা ছেড়ে দিয়ে বড় সাইজেরগুলোই রাখি। বড় ইলিশের চাহিদাই বেশি। দামও ভালো। সবে ধরা শুরু করলাম। দেখা যাক ভাগ্য ফেরে কিনা।’

ইলিশের স্বর্গরাজ্য খ্যাত চাঁদপুরের মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে নেমেছে জেলার অর্ধ লক্ষাধিক জেলে। করোনা মহামারির সুযোগে এবারও নদীতে প্রচুর জাটকা ধরা হয়েছে। এরপরও ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না বলে মনে করেন তারা।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এবার কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ পাবো। একেকটি মা ইলিশ লাখ লাখ ডিম ছাড়ে। এবারও ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে।’

মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালিত হয়েছে। সময় জাটকা সম্পৃক্ত ৬টি জেলা বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, চাঁদপুর লক্ষ্মীপুর জেলার অভয়াশ্রম অধ্যুষিত নদীতে জাল ফেলা নিষেধ ছিল।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ‘দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। অথচ অবৈধভাবে জাটকা ধরার নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করছে। অবৈধ মৎস্য আহরণে যে ট্রলারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণ মৎস্যজীবীদের নয়, কিছু ধনী অসাধু ব্যক্তির। তারা সমাজ দেশের শত্রু।’

মন্ত্রী আরও জানান, ‘অনেক সময় বিষাক্ত দ্রব্য অবৈধ বালু উত্তোলনের জন্য মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে না। এগুলো বন্ধে ইলিশের অভয়াশ্রম গড়া হয়েছে। ক্যামেরা বসানো হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ১৩টি জেলায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনায় ৩৮৭টি মোবাইল কোর্ট ১৫৫৪টি অভিযানের মাধ্যমে হাজার ২৬৭টি ক্ষতিকর বেহুন্দি জাল, ৭১৬ দশমিক ১৮৪ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, হাজার ৬৭টি অন্যান্য জাল আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৭ মেট্রিক টন জাটকা হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন অন্যান্য মাছ জব্দ করা হয়েছে।

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট