বর্তমানে দেশে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করার পর চূড়ান্ত দলগুলোতে দেওয়া হয় নিবন্ধন নম্বর। কমিশন থেকে দলগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এক ক্রমিক থেকে এ নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হয়েছে। মূলত নির্বাচন কমিশনের কাছে দলগুলো নিবন্ধনের নম্বরের ভিত্তিতে পরিচিত পায়। কমিশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ২০০৮ সালে দেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে ২০০৮ সালে নিবন্ধন পায় ৩৯টি। এছাড়া ২০১৩ সালে ২টি এবং বাকি দুটি দল নিবন্ধন পায় ২০১৯ সালে। তবে আদালতের আদেশ ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় এদের মধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ৪টির নিবন্ধন বাতিল হয় বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশনের সময়ে। এছাড়া নিবন্ধন পাওয়ার পর স্থায়ী গঠনতন্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এক বছরের মাথায়ই ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
ওয়ান ইলেভেনের সময় এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যবাধতামূলক করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী, ইসিতে আবেদন সাপেক্ষে শর্তপূরণ করলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। ওই সময় জমা পড়া ১১৭টি রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। নিবন্ধন দেওয়ার সময় দলগুলোকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে স্থায়ী গঠনতন্ত্র জমাসহ আরও কিছু শর্ত পালনের নির্দেশনা দেয় ইসি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের পর যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচন কমিশন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) প্রথম নিবন্ধন দেয়। এই হিসেবে দলটির নিবন্ধন নম্বর ০০১। এ দলটিকে ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর নিবন্ধন দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে এলডিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর। দলটির প্রতীক ছাতা। জাতীয় পার্টি-জেপি নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০০২। জেপি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জেপির প্রতীক বাই সাইকেল। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়। এ দফায় নিবন্ধন পায় বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)। নিবন্ধন নম্বর-০০৩। দলটির প্রতীক চাকা। ওই দিন নিবন্ধন পাওয়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নিবন্ধন নম্বর ০০৪। দলটির প্রতীক গামছা। ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০০৫। তাদের দলীয় প্রতীক কাস্তে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নম্বর ০০৬। আওয়ামী লীগ ইসিতে নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর। ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক দলের প্রতীক নৌকা।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে একই দিনে ইসির নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপির নিবন্ধন নম্বর ০০৭। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত দলটির প্রতীক ধানের শীষ। গণতন্ত্রী পার্টি ইসির নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর। নিবন্ধন নম্বর ০০৮। দলটির প্রতীক কবুতর। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিও (মোজাফ্ফর) ওই বছরের ৩ নভেম্বর নিবন্ধন পায়। এর নিবন্ধন নম্বর ০০৯। দলটির প্রতীক কুঁড়েঘর। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নিবন্ধন নম্বর ০১০। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর নিবন্ধন পাওয়া দলটির প্রতীক হাতুড়ি। বিকল্প ধারা বাংলাদেশ-এর নিবন্ধন নম্বর ০১১। একই দিনে নিবন্ধন পাওয়া দলটির দলীয় প্রতীক কুলা। প্রয়াত এইচএম এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির নিবন্ধন নম্বর ০১২। আরও ১১টি দলের মতো জাতীয় পার্টি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর নিবন্ধন পায়। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটির প্রতীক লাঙ্গল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নিবন্ধন পায় ৩ নভেম্বর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০১৩, দলীয় প্রতীক মশাল। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নিবন্ধন পেয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ০১৪। উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন স্থায়ীভাবে বাতিল করে ইসি। জামায়াতের দলীয় প্রতীক ছিল দাঁড়িপাল্লা। হাইকোর্টের মনোগ্রাম দাঁড়িপাল্লাকে কোনও রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না বলে উচ্চ আদালত আদেশ দেয়। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও দল দাঁড়িপাল্লাকে তাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না বলে নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে। একইসঙ্গে জামায়াতের প্রতীকটিও বাতিল করে ইসি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ইসির নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০১৫। দলটির প্রতীক তারা। একই দিনে নিবন্ধন পায় জাকের পার্টি। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০১৬ এবং প্রতীক গোলাপ ফুল। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)ও ৯ নভেম্বর নিবন্ধন পায়। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০১৭ এবং প্রতীক মই। একই দিনে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি-বিজেপির নিবন্ধন নম্বর ০১৮। বিজেপির দলীয় প্রতীক গরুর গাড়ি। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর। তাদের নিবন্ধন নম্বর ০১৯ এবং দলীয় প্রতীক ফুলের মালা।
বাংলাদেশ খেলাফল আন্দোলন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০২০ এবং দলীয় প্রতীক বটগাছ। একই দিনে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। দলটির নিম্বর নম্বর ০২১ এবং দলীয় প্রতীক হারিকেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)ও ১৩ নভেম্বর নিবন্ধন পায়। দলটির নিবন্ধন নম্বর-০২২ এবং দলীয় প্রতীক আম। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর নিবন্ধন নম্বর হচ্ছে ০২৩। ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর নিবন্ধন পাওয়া দলটির প্রতীক খেজুরগাছ। ওইদিন গণফোরামও নিবন্ধন পায়। গণফোরামের নিবন্ধন নম্বর ০২৪, প্রতীক উদীয়মান সূর্য। এছাড়া গণফ্রন্টের নিবন্ধন নম্বর ০২৫। ১৩ নভেম্বর নিবন্ধন পাওয়া দলটির প্রতীক মাছ। ওয়ান ইলেভেনে কিং পার্টি খ্যাত প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টি-পিডিপি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পরপরই নিবন্ধন পায়। ওই বছর ১৩ নভেম্বর নিবন্ধন পাওয়া দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ০২৬। দলীয় প্রতীক বাঘ। নির্বাচন কমিশনের শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর ১৪ ডিসেম্বর এ দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে ইসি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের নিবন্ধন নম্বর ০২৭। দলটি ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর নিবন্ধন পায়, দলীয় প্রতীক গাভী।
২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর ইসির নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০২৮, প্রতীক কাঁঠাল।
নির্বাচন কমিশনে ২৯তম দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছিল ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন। দলটি ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর নিবন্ধন পায়। নিবন্ধন নম্বর ০২৯। দলীয় প্রতীক চাবি। তবে ইসির শর্ত পূরণ না হওয়ায় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর এ দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর নিবন্ধন পায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩০। দলীয় প্রতীক চেয়ার।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ইসির নিবন্ধন পায় ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩১ এবং দলটির প্রতীক হাতঘড়ি। একই দিনে নিবন্ধন পায় ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩২। দলীয় প্রতীক মিনার।
২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর ইসি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে নিবন্ধন দেয়। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩৩, প্রতীক রিকশা। একই দিনে ইসির নিবন্ধন পায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩৪ এবং দলীয় প্রতীক হাতপাখা।
২০ নভেম্বর বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নিবন্ধন পায়। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩৫। তাদের দলীয় প্রতীক মোমবাতি।
নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নিবন্ধন পেয়েছিল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ০৩৬। দলীয় প্রতীক হুক্কা। তবে নির্বাচন কমিশন গত ৩১ মার্চ জাগপার নিবন্ধন বাতিল করেছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নিবন্ধন নম্বর ০৩৭। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নিবন্ধন পাওয়া দলটির প্রতীক কোদাল। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর ইসির নিবন্ধন পায় খেলাফত মজলিস। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৩৮। দলীয় প্রতীক দেওয়াল ঘড়ি।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন পেয়েছিল বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ৩৯। তবে নিবন্ধন পেতে ইসির শর্তানুসারে এক বছরের মধ্যে পার্টির সংধোশিত গঠনতন্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১০ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। ফ্রিডম পার্টির দলীয় প্রতীক ছিল কুড়াল।
২০১৩ সালের ২ জুন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৪০। দলটির প্রতীক হাত (পাঞ্জা)। একই বছর ৮ অক্টোবর ইসি থেকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) নিবন্ধন পায়। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৪১। দলটির প্রতীক ছড়ি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) ইসির নিবন্ধন পায় ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৪২ এবং দলীয় প্রতীক টেলিভিশন।
বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশনের সময় ৭৬টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল। এরমধ্যে কোনও দলই ইসির চূড়ান্ত বিবেচনায় নিবন্ধন পায়নি। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পায়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এনডিএমকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৪৩ এবং প্রতীক সিংহ। আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ কংগ্রেস ইসির নিবন্ধন পায় ২০১৯ সালের ৯ মে। দলটির নিবন্ধন নম্বর ০৪৪ এবং দলীয় প্রতীক ডাব।
– ঢাকা অফিস