নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর করার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জামিন পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম। ছয় মাস কারাবাসের পর বুধবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এ সময় তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় ফুলের মালা।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাড়ে ৫টায় জামিনের কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি কারামুক্ত হয়েছেন। হাজি সেলিমের ব্যক্তিগত একান্ত সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেলাল বলেন, কারাগার থেকে বের হয়ে ইরফান সেলিম প্রথমে আজিমপুর কবরস্থানে মায়ের কবর জিয়ারত করেন। এখন তিনি পুরান ঢাকার দেবীদাস ঘাট লেনের দাদার বাড়িতে রয়েছেন।
ইরফান কারাগারে থাকা অবস্থায় তার মা গুলশান আরা সেলিম মারা যান। গুলশান আরাও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। ইরফান সেলিমের বাবা হাজি সেলিম আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং তার শ্বশুর একরামুল করিম চৌধুরীও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর। বুধবার দুপুরে ইরফান সেলিমের আইনজীবী প্রাণ নাথ বলেন, গত ২৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ইরফান সেলিমের জামিন বহাল রাখেন। সর্বোচ্চ আদালতের সেই আদেশ আজ বুধবার বিচারিক আদালতে আসে। আসামিপক্ষে সকালেই জামিননামা জমা দেওয়া হয়। আজ বিকেলেই কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে জামিননামা পৌঁছালে তিনি মুক্তি পাবেন।
ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে করা মোট পাঁচটি মামলার মধ্য চকবাজার থানায় করা একটি মাদক ও একটি অস্ত্র মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাকে অব্যাহতি দিয়ে সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বাসায় মাদক রাখার দায়ে একটি মামলায় ইরফান সেলিমকে এক বছর ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাসের কারাদ-াদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এ দুই মামলায় নির্বাহী আদালতে আপিল করে জামিনে রয়েছেন তিনি। আর নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগের মামলায় সর্বোচ্চ আদালতে তার জামিনের আদেশ বহাল রয়েছে।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ধানম-ির কলাবাগান ক্রসিংয়ে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়েছিল ‘সংসদ সদস্য’ স্টিকার লাগানো হাজী সেলিমের গাড়ি। ঘটনার সময় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম গাড়িতে ছিলেন না। তার ছেলে ইরফান ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। এরপর নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা মোটরসাইকেল থামান এবং নিজের পরিচয় দেন। এ সময় হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে দুজন ব্যক্তি নেমে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফকে মারধর করেন।
একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় ওয়াসিফের স্ত্রীকেও লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হয়ে গেলে সংসদ সদস্যের গাড়ি ফেলে মারধরকারীরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে গাড়ি ও মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ইরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী মো. জাহিদুল মোল্লা, এ বি সিদ্দিক দিপু ও গাড়িচালক মিজানুর রহমান এবং অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনকে আসামি করে ২৬ অক্টোবর ধানম-ি থানায় ‘মারধর ও হত্যাচেষ্টা’ মামলা করেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ।
ওই দিনই ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরান ঢাকায় তার বাসায় অভিযানে ৩৮টি ওয়াকিটকি, পাঁচটি ভিপিএস সেট, একটি পিস্তল, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফকেস, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ড্রোন এবং সাত বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মামলায় ইরফান সেলিম ঢাকার আদালতে জামিনের আবেদন করলে ওই আদালত গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন ইরফান সেলিম। হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
– ঢাকা অফিস