শষ্য ভান্ডার খ্যাত খুলনার দাকোপে এবছর দ্বিগুণের বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে সেচের পানির অভাবে তরমুজের বাম্পার ফলন না হলেও বাম্পার দাম পেয়ে এলাকার কৃষকরা খুব খুশি। কৃষি অধিদপ্তরের হিসাব মতে এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকাবাসি ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমনের পর রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় তরমুজ চাষে। এবছর ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর বা ২৫ হাজার ৫০০ সাড়ে ৫২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর বা ১১ হাজার ৫০০ সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে। এছাড়া সবজি ২৭০ হেক্টর, বোরো ধান ১৯০ হেক্টর ও বাংগি ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তবে প্রচন্ড খরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎস খাল ও পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজ ক্ষেতে সেচ দিতে না পারায় ফলন তেমন ভালো হয়নি বলে এলাকার একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন। ইতি মধ্যে তরমুজ ক্ষেত বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এবছর প্রতি ৩৩ শতক বিঘার ক্ষেত ১ লাখ থেকে শুরু করে ২০ থেকে ৩০ হাজার আর ৫০ শতক প্রতি বিঘার ক্ষেত ১ লাখ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। তরমুজের ফলন কম হলেও বাম্পা দাম পেয়ে এলাকার কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। সরেজমিনে আলাপকালে একাধিক কৃষক এমন খুশির কথা জানান।
উপজেলার সাহেবের আবাদ এলাকার কৃষক সুশান্ত জোয়াদ্দার ও হাবিবুল্লাহ গাজী জানান, তারা দুইজনে মিলে ১৬ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে তাদের প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তারা ৫ বিঘার একটি ক্ষেত বিক্রি করেছেন সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। বাকি ক্ষেতগুলোও ওই রকম দাম বলছেন ব্যাপারীরা। তবে সেচের পানির অভাব ও পোকার আক্রমন বেশি থাকায় এবছর ফলন অনেক কম হয়েছে। কিন্তু ভালো দাম পেয়ে তারা খুব খুশি বলে জানান। তাদের মত একই এলাকার ইন্দ্রজিত রায়, অরুপ কয়াল, পানখালীর ফাল্গুনি হালদার, সুদিপ্ত ঘোষসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক তাদের খুশির কথা জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন মাঠের খাল ও জলাশয়গুলোতে পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় এবং নাব্যতা কমে যাওয়ায় পানি শুকিয়ে গেছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানিও প্রচন্ড লবণ থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকরা। যে কারণে এবছর তরমুজের ফলন কম হয়েছে। তার মতে গড় হিসাব অনুযায়ী ১ বিঘা জমিতে কম পক্ষে ৮০০ তরমুজ গাছ লাগানো যায়। প্রতি গাছে একটি করে ফল ধরলে তার ওজন কমপক্ষে ৬ কেজি হয়। আর ১৫ টাকা করে প্রতি কেজি ধরলে প্রতি বিঘায় ৭২ হাজার টাকা দাড়ায়। এতে ২৫৫৫২.৫ বিঘা জমিতে ১৮৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা প্রায় ২০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বাম্পার ফলন হলে আরোও কয়েক‘শ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হতো বলে তার অভিমত। তিনি বিএডিসিকে ১০২টি খাল খননের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ইতি মধ্যে কামারখোলা এলাকায় ১৪ কিঃ মিঃ খাল খননও করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে খনন কাজ ব্যহত হচ্ছে। সব খালগুলো এবং কিছু মিনি পুকুর খনন করতে পারলে কৃষকদের সেচের পানি সংকট সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।
– মোঃ জাহিদুর রহমান সোহাগ, দাকোপ