সকালে গৃহকর্মী এসে অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের বাসার কলিংবেল চাপেন। কয়েকবার চেষ্টা এবং ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি বিল্ডিংয়ের অন্য একটি বাসায় গিয়ে জানান। তাঁরা বিষয়টি জানান রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রোজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাফফর আহমেদকে। তিনি পুলিশে খবর দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখতে পান ড. তারেক শামসুর রেহমানের মৃতদেহ বাথরুমে পড়ে আছে।
মো. মোজাফফর আহমেদ বলেন, বাসায় ঢুকে উনাকে বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় তাঁর মুখে বমি এবং এক পা বাথরুমের কমোডের ভেতরে ছিলো।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার দশ মিনিট আগে দারোয়ান প্রণবকে ইন্টারকমে কল করে তারেক শামসুর রেহমান জিজ্ঞাসা করেন পাশের সুপার শপটি খোলা আছে কিনা। তিনি ‘খোলা আছে’ বলে জানান।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১০টা ১২ মিনিটে বাসা থেকে বের হন ড. তারেক শামসুর রেহমান।
এরপর পাশের ডেইলি শপ-এ যান। সেখান থেকে ঘুরে এসে পাশের একটা বিল্ডিংয়ের সভাপতির সংগে তাঁর বিল্ডিংয়ের সামনে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। এসময় তাঁর সংগে ডেইলি শপের একজন ডেলিভারি ম্যান ছিলেন।
এরপর বাসার লিফটে ওঠার সময় এক ভাড়াটিয়া ড. রেহমানকে জিজ্ঞাসা করেন, এত অল্প বাজার করেও কেন ডেলিভারি ম্যান সংগে আনলেন। জবাবে তিনি জানান, শরীরটা একটু খারাপ। তাছাড়া রোজা রেখেছেন বলে একটু দুর্বল লাগছে।
ওই সময় বাসায় ঢোকার পর থেকে তিনি আর বের হননি।
বাসার মটর নষ্ট হওয়ায় শুক্রবার দুপুর ১২টায় দারোয়ান প্রণব ইন্টারকমে তারেক শামসুর রেহমানকে ফোন করেন। কয়েকবার কল করলেও তাঁর টেলিফোন ব্যস্ত পান। এরপর দারোয়ান আর খোঁজ নেননি।
এরপর পুরো দিন এবং রাত কেটে যায়। শনিবার সকালে গৃহকর্মী এসে দরজার বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে পাশের বাসার লোকজনকে জানান। পরে পুলিশে খবর দিলে বাসার দরজা ভেঙে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মোজাফফর আহমেদ জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি এলাকায় দোলনচাঁপা-১ এ থাকতেন। তাঁর ফ্ল্যাট নম্বর ১৩০৪। অধ্যাপক রেহমানের স্ত্রী তাঁর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় থাকেন। ফলে বাসায় তিনি একাই থাকতেন।
বিল্ডিংয়ের লোকজনের ধারনা, স্ট্রোকে তিনি মারা গেছেন।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি আরো জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হবে। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।