আকাশে চাঁদ। রোজার বাঁকা চাঁদ। দুয়ার খুলেছে রহমতের। শুরু হয়েছে রহমতের উৎসব। জান্নাতেও সাজ সাজ রব। সেজেছে নতুন রূপে। রহমত বরকত নাজাতের মাস রমজান। রহমতের ফল্গুধারায় ডুবে আছে পৃথিবী। অধীর অপেক্ষায় বিশ্ব মুসলিম- প্রভুর রহমতÑ করুণার ভাগ পেতে। পবিত্র রোজার মাসকে স্বাগত জানানোর ভাব ও ভাষা ভিন্ন। শুধু আহলান- সাহলান ইয়া শাহরু রমজান কিংবা খোশ আমদেদ মাহে রমজান নয়; বরং এ মাসে নিজের জীবনকে ধর্ম ও ইমানের রঙে রাঙিয়ে অধিক ইবাদতে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করাই রোজাকে স্বাগত জানানোর প্রকৃত পথ। হজরত মুহম্মদ (সা) দয়া ভরা আবেগ-উচ্ছ্বাস নিয়ে রোজাকে স্বাগত জানাতেন। উৎসাহিত করতেন উম্মতকেও। কারণ এ মাস আল্লাহর মাস। আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। ১১ মাস জাগতিক স্বপ্ন-স্বাদে ডুবে থাকা বেপথের মানুষটিও রোজায় খুঁজে পাবে আল্লাহর একান্ত রহমত। খুঁজে পাবে অতীতে পাপ মোচনের হীরকসন্ধান। হজরত জাবের (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য, স্বয়ং আমিই এর প্রতিদান দেব। মুসলিম শরিফ : ২৭৬০
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। সুরা বাকারা : ১৮৩ আল্লাহতায়ালা আরও বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজার মাস পায়, সে যেন রোজা রাখে। সুরা বাকারা : ১৮৫ রোজার ফজিলত সম্পর্কে নবী করিম (সা) বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারি শরিফ : ১৯১০
নবীজি (সা) আরও বলেছেন, রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয়, বেহেশতের গাছের পাতা থেকে আরশের নিচে বড় বড় চোখবিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন! যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখেও তাদের চোখ জুড়াবে। ফাজায়েলে রমজান লি-ইবনে শাহীন, পৃ. ১৫
হজ রত আবু হুরায়রা সূত্রে রাসুল (সা) বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। বোখারি শরিফ : ৩১০৩
অপর হাদিসে এসেছেÑ জান্নাতের মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বোখারি শরিফ : ১৭৭৯
আমাদের জীবনে কত রোজা আসে-যায়, আল্লাহর রহমতের ছিটে-ফোঁটাও হয়তো ভাগ্যে জোটে না! শুধু রোজাকে স্বাগত জানানোর ভাষা জানি না বলে। আজকের এই দিনে আসুন দুনিয়ার নেশা ছেড়ে, ইবাদতের নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করি। ডুব দিই আল্লাহর প্রেমে। সবাই গাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানÑ চাঁদ আসিছে রে নতুন চাঁদ/অপরূপ প্রেম-রসের ফাঁদ/বাঁধিতে সকলে এক সাথে/ গলে গলে / মিলিয়া চলিব তাঁর পথে/ দলে দলে।
পুুনশ্চ : বিশ^জুড়ে করোনার মহামারী চলছে। কাছে-পিঠের কত মানুষ আক্রান্ত এই রোগে! চোখের সামনেই চিরদিনের জন্য বিদায় নিচ্ছেন আপনজনরা। বিদায় নিচ্ছেন মায়ার এই পৃথিবী থেকে। বিপরীতে ঘরে-বাইরে আর হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন অনেক মানুষ। অসহায় মানুষ। সামান্য এই অনু ভাইরাসের কাছে আমরা অসহায়! অপারগ!
চোখজোড়া বন্ধ করলেই শুনতে পাই সে অপরাগতার আত্মচিৎকার। তবু আমরা হতাশ নই। আশা ছাড়িনি। একমাত্র আল্লাহর দয়ামায়াই আমাদের সম্বল। আল্লাহর রহমতের এই স্রোতধারার সময়ে আসুন নিজেকে ঘরবন্দি করি। পুরো রোজার মাসের সূচিমালা তৈরি করি। পরনিন্দা পরচর্চা-গিবত বাদ দিয়ে একটি রুটিনমাফিক জীবনে প্রবেশ করি।