লকডাউনে যেভাবে পাওয়া যাবে ব্যাংকিং সেবা

4
Spread the love

মহামারি করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিলেও অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে গার্মেন্টস কারখানা ব্যাংক চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের জারি করা লকডাউনের  মাঝেও ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাবে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো ব্যাংক খোলা থাকবে না। এমনকি সব ব্যাংকের সব শাখাও খোলা থাকবে না। আর ব্যাংক কর্মকর্তাদের সবার ব্যাংকে আসতে হবে না। মূলত লকডাউনের মাঝে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকবে।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এই সার্কুলারে বলা হয়, ‘১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত দৈনিক ব্যাংকিং সময়সূচি হলোÍ সকাল ১০টা হতে দুপুর একটা পর্যন্ত। তবে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনে আড়াইটা  পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন পূর্বক রোস্টারিং এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সীমিত লোকবল দিয়ে ব্যাংকিংসেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, ‘বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়, প্রধান শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা (এডি শাখা না থাকলে) খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রবিবার এবং মঙ্গলবার খোলা রাখতে হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ‘ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব স্ব অফিসে  আনা-নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

বাংলাদেশ বলছে, ‘বিধিনিষেধ চলাকালে সব গ্রাহক যাতে সেবা পাযন, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ, যেসব শাখা বন্ধ থাকবে, সেসব শাখার গ্রাহকসেবা কার্যক্রম খোলা রাখা শাখার মাধ্যমে সম্পাদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

বন্ধ রাখা শাখার গ্রাহকদের গ্রাহকসেবা প্রাপ্তির বিষয়ে অবহিত করতে ওই শাখার দৃশ্যমান স্থানে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘সব খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন পূর্বক রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সীমিত লোকবল দিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এটিএম কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ এটিএম বুথগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

যেসব সেবা পাওয়া যাবে:

সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘গ্রাহকের হিসাবে সর্বপ্রকার জমা উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট বা পে-অর্ডার ইস্যু জমা গ্রহণ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা, অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ অন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর এনআরবি বন্ডে এবং বিভিন্ন প্রকার জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেটের মেয়াদপূর্তির নগদায়ন কুপনের অর্থ পরিশোধ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউটিলিটি যথা (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ টেলিফোন) বিল গ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের বা ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, ‘সমুদ্র, স্থল বিমানবন্দর এলাকায় (পোর্ট কাস্টমস এলাকা) অবস্থিত ব্যাংকের শাখা-প্রশাখা বুথগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর বা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংক চালু রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।  উপ সচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত ‘বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংকিং সেবা প্রদান’ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারির জন্য আদেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের একান্ত সচিবের কাছেও পাঠানো হয়।

ঢাকা অফিস