অন্যবারের ন্যায় এবারও যশোরের মণিরামপুরে গিট ব্লাস্টের আক্রমণে স্বপ্ন ভেগেছে বোরো চাষিদের। ধান পাকার আগ মুহুর্তে ক্ষেতে ব্লাস্ট দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বহু কৃষক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন ব্রি-২৮ ও মিনিকেট জাতের ধান চাষিরা। ধানে গোলা ভরার স্বপ্ন ফিকে হয়েছে তাদের।
কোন প্রকার বিষ প্রয়োগ করেও প্রতিকার মিলছে না কৃষকদরে। উপায়ন্তর না পেয়ে কাঁচা ধান কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
কৃষকদের অভিযোগ, অসহায় মুহুর্তে কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ পাওয়া যায়না। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার কৃষকদের খবর রাখেন না।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিন উপজেলার রোহিতা, শেখপাড়া ও রঘুনাথপুর মাঠ ঘুরে কয়েকটি ক্ষেত ব্লাস্টে নষ্ট হতে দেখা গেছে।এছাড়া কাশিমনগর, দেবিদাসপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বিক্ষিপ্তভাবে ব্লাস্টের আক্রমণের খবর মিলেছে।
যদিও ব্লাস্টের কোন খবর রাখেন না উপজেলা কৃষি অফিস।
রোহিতা শেখপাড়া গ্রামের আজগার আলী বলেন, একবিঘা জমিতে ব্রি-৬৩ চাষ করেছি। ধান পাক শুরু করেছে। ৮-১০ দিন আগ থেকে ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। বিষ প্রয়োগ করেও প্রতিকার পাইনি। ব্রি-৬৩ জাতের ধানের ফলন বিঘা প্রতি ২৫ মণ। আমার জমিতে পাঁচ মণ হবে কিনা সন্দেহ।
আজগার অভিযোগ করেন, কোন সময় স্থানীয় কৃষি অফিসারকে পাশে পাইনে। ধানের খারাপ অবস্থা দেখে কীটনাশকের দোকানে দৌঁড় মারি। দোকানদারের বুদ্ধিমত বিষ দিই। কাজ হয় না।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল গফফার বলেন, দেড়বিঘা মিনিকেট ধান করিছি। পাকার মুহুর্তে শীষের গিটের নিচ থেকে পোকা কেটে দিচ্ছে। স্প্রে করিছি। কাজ হয়নি। উপায় না পেয়ে দশ কাঠার ধান কেটে দিয়েছি। বাকিটারও একই অবস্থা।
জলকর রোহিতা গ্রামের রাহাতউল্লাহ নামে এক চাষির দুই বিঘা জমির ধান ব্লাস্ট ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনিও ধান কেটে ফেলছেন।
এছাড়া শেখপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের একবিঘা, মনিরুল ইসলামের একবিঘা, সাহেব আলীর ১০ কাঠা, হায়দার আলীর ১০ কাঠা, আমিনুর হোসেনের ১০ কাঠা, খোকনের ১০ কাঠা ও মাহমুদকাটি গ্রামের মুজিবর হোসেনের ১৫ কাঠা জমির বোরো ধান ব্লাস্টের আক্রমণে শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে সম্প্রতি মণিরামপুরের উপরদিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধানের শীষ নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে মণিরামপুরে এবার ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। তার মধ্যে গরম হাওয়ায় আট হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এছাড়া এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
রোহিতা ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা তুহিন বিশ্বাস বলেন, এবার আমার এলাকায় ব্লাস্ট নেই। আমি সবসময় মাঠে থাকি। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিই। কোন কৃষক ফসলের সমস্যা নিয়ে যদি না জানায় তাহলে সে দোষতো আমার না।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসানও ব্লাস্ট নেই বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, উপজেলার কোথাও বোরো ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা যায়নি। ঝড়ো হাওয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে আট হেক্টর জমির ধানের শীষ শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে।
একপর্যায়ে কৃষকদের নাম ঠিকানা নিয়ে তিনি আজ (মঙ্গলবার) বিকেল তিনটার দিকে সরেজমিন রোহিতা শেখপাড়া মাঠে গিয়ে ব্লাস্ট আক্রান্ত ক্ষেতের সন্ধান পান। ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে এই কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। আগামীতে যেন কৃষক ফসলের রোগ নিয়ে ক্ষতির শিকার না হন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
– আনোয়ার হোসেন,মণিরামপুর