ভৈরব নদের বিভিন্ন স্থানে নব্যতাহ্রাস ও পলি জমে চর পরে দেশের বৃহত্তম যশোরের অভয়নগর নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর অচল হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। নদী খনন ও অবৈধ দখলদ্বারদেরমুক্ত না করা হলে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ব্যবসা-বানিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়বে। ফলে এর সাথে জড়িত হাজার হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। রেল, মহাসড়ক ও নৌ-পথ এর চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে গড়ে উঠা উপজেলার শিল্প-বানিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়া এখন দেশের বৃহত্তম ও প্রথম শ্রেনির নৌ-বন্দর। নওয়াপাড়া মোকাম থেকে নদী পথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত কার্গো জাহাজ বোঝাই বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য শস্য, পাথর, কয়লা, সারসহ নানা প্রকারের দ্রব্য সামগ্রী আসে ও খালাস হয়। আবার এ বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একইভাবে পন্য সরবরাহ হয়ে থাকে। গতকাল রবিবার সরেজমিন নওয়াপাড়া বন্দর এলাকার সিডল টেক্সটাইল মিলের পূর্বপার্শ্বে ভৈরব ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুরে পলি জমে চর পরে নদের যেমন নব্যতা কমে গতি পথ ছোট হয়ে গেছে। অপরদিকে মহা উৎসবে মেতে উঠেছে নদী খেকো অবৈধ দখলদাররা। সুযোগ বুঝে প্রথমে নদী পথের ঘাট পরে ইমারত তৈরী করে নিচ্ছে। নদের নব্যতা কমে ও গতি পথ ছোট হওয়ায় নৌযান চলাচলে বাধাগ্রাস্থ হচ্ছে। সময় মতো মালামাল লোড আনলোড না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কার্গো মালিক ও পন্য আমদানীকারকরা। এই মুহুর্তে নদী খনন ও দখলদার মুক্ত করা না হলে নৌ-যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এতে করে এখানকার ব্যবসা-বানিজ্য মারাতক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফলে এর সাথে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। এ বিষয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেসনের নেতা ও এমভি হাজেরা-৪ মাস্টার মো: হাসান জানান, নওয়পাড়া ভৈরব সেতু থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় ২নাটিক্যাল নদের তীরে অধিকাংশ স্থানেই চর জেগে উঠেছে ও নব্যতা হারিয়ে গতিপথ ছোট গেছে। জোয়ারের সময়ও মালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচলে বিঘœ ঘটে। তবে ভৈরব নদের খুলনা নিউজপ্রিন্ট থেকে নওয়াপাড়া চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫নাটিক্যাল এর মধ্যে কিছু কিছু স্থানে নদের তীরে ছোট ছোট চর দেখা দিয়েছে ও নদী তার নব্যতা হারিয়েছে। ভৈরব নদের এই ১৫নাটিক্যাল দ্রুত সময়ের মধ্যে খনন(ড্রেজিং) না করা হলে, এ নৌপথ দিয়ে মালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পরবে। এবং নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর অচল হওয়ার আশংখা দেখা দিবে। তিনি আরও বলেন, নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরে প্রতিদিন মালবাহী কার্গো জাহাজ পন্য খালাস করতে এসে জোয়ারের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। ফলে আমদানীকারক ব্যবসায়ীরা একদিকে পন্য খালাসে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে জাহাজ ড্যামারেজসহ গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মন্ডল বলেন, ভৈরব নদের নব্যতা ও পলি জমা চর দেখে আশংকিত হয়ে পরছি। এ বিষয় আমরা নওয়াপাড়া বিআইডব্লিউটি এর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ^াস দিয়েছেন এ রমজান মাসের মধ্যেই নদী ড্রেজিং(খনন)এর কাজ শুরু করবেন। তিনি আরও বলেন, অভয়নগরসহ আশে পাশের উপজেলার হতদরিদ্র নি¤œ আয়ের প্রায় ২০হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক জীবিকার তাগিদে এ বন্দরের কাজ করে। এ নৌ-বন্দর বন্ধ হলে আমার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বে। নওয়াপাড়া ভৈরব নদের অবৈধ দখল মুক্ত ও নৌ-বন্দর সচল রাখার জন্য রাজপথে আন্দোলনসহ আইনী লড়াই চালিয়ে যাবো। নওয়াপাড়া বন্দরের সহকারী পরিচালক মো: ফারুক উদ্দিন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি জানতে পেরেছি ভৈরব নদের বিভিন্ন স্থানে নব্যতা কমে গেছে পলি জমে চর জেগেছে। চর জায়গা স্থান গুলো চিহ্নিত করে গভির ভাবে নদী ড্রেজিং করার জন্য ডিজি মহাদয়ের নিকট কাগজ পত্র পাঠিয়েছি। আশা প্রকাশ করেন অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভৈরব নদের ও বন্দর এলাকায় নব্যতা সঠিত রাখার জন্য ড্রেজিং(খনন) কার্যক্রম চালানো হবে। তিনি আরও বলেন, নদের পার যারা দখল করে আছেন তাদের যাচাই বাচাই করে অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
– অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি-