দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় ঢেউ এত মারাত্মক হয়ে উঠবে কেউ ভাবতে পারেনি। ফলে সরকারকে বাধ্য হয়ে লকডাউন দিতে হয়েছে গত সোমবার থেকে। এই লকডাউনের ভেতর দেশের সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাঝারি আয়ের লোকজন বিপাকে পড়ে। তারা দোকানপাট খুলে দেয়ার জন্য বিক্ষোভ মিছিল করে। সরকার তাদের দাবি মেনে এর লকডাউনের মধ্যেই দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর হঠাৎ একদিনে গত এক বছরের সর্ব্বোচ্চ মৃত্যু ৭৪ জনে দাঁড়ালে দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবার কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার মনে করছে এখন কঠোর লকডাউন দেয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
দেশে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও বেড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু যেখানে ছিল ৬৪, দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা ৭৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে বর্তমানে চলমান ‘লকডাউন’ আর ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ মধ্যে পার্থক্য কী হবে? এখন যেভাবে লকডাউন চলছে, সর্বাত্মক লকডাউনের সময়ও কি একই পরিস্থিতি থাকবে? নাকি নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়বে?
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন: ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি হয়তো তখন আর করা হবে না। বর্তমানে যে ‘লকডাউন’ চলছে সেখানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিং মল খোলা হয়েছে। অফিস–আদালত, ব্যাংক, বিমা সবকিছুই খোলা। বেসরকারি খাতের সবকিছুই খোলা। খোলা রয়েছে শিল্পকলকারখানা। তবে ওষুধের দোকান, নিত্যপণ্যের দোকান জরুরি সেবার মধ্যেই পড়ে। তাই এগুলো সর্বাত্মক লকডাউনেও খোলা রাখা হবে। তবে নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। আর সরকারের অন্যান্য জরুরি সেবা হলো বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, স্বাস্থ্য, ত্রাণ বিতরণ, স্থলবন্দর, ইন্টারনেট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনানেয়া ও এর সঙ্গে জড়িত অফিসগুলো।
আমরা আশা করবো সরকার এই সর্বাত্মক লকডাউন কঠিনভাবে কার্যকর করতে পারলে দেশে করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার কমে আসবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। এ ব্যাপারে জনসাধারণের সহযোগিতামূলক মনোভাব সবচেয়ে জরুরি। সরকারে আদেশ মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা এখন সময়ের বড় দাবি। ঘোষিত এই সর্বাত্মক লকডাউনে জনগণ সহযোগিতা না করলে সব ভেস্তে যাবে। দেশে করোনার মহাদুর্যোগ ঘনিয়ে আসবে। আমাদের মত সব সীমিত দেশে জনগণের ঐকান্তিক ইচ্ছা আর সরকারি নজরদারির বাইরে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।