কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ হিমছড়ি পয়েন্টে ভেসে উঠেছে বিশালাকৃতির মৃত নীল তিমি। এক নজর দেখতে স্থানীয়রা ছুটে আসছেন আশপাশ থেকে। সেখানে ভিড় জমেছে উৎসুক জনতার।
আজ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সাগরের পানিতে মৃত অবস্থায় ভাসমান দেখে স্থানীয়রা। তখনো পুরোপুরি জোয়ারের পানি নেমে যায়নি। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ায় পর পূর্ণ ভাটায় সাগরের বালুতটে পড়ে থাকা মৃত তিমি স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। পরে স্থানীয়রা জেলা, উপজেলা প্রশাসন বনবিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরে খবর দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৃত তিমির পচন ধরায় গন্ধ ছড়াচ্ছে। সাগরের পানিতে ভাসতে ভাসতে মৃত তিমিটির সামনের অংশ বিকৃত হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর নবী বলেন, ‘লোকমুখে শুনে আমি সৈকতে গিয়ে দেখলাম মৃত তিমিটি পঁচে গেছে। দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। এর গায়ের রং লালচে হয়ে গেছে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জে
হোসেন রিয়াদ জানান, মৃত তিমির শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং গন্ধে অনুমান করা যাচ্ছে অন্তত এক সপ্তাহ আগে তিমিটি মারা গেছে। সাগরে ফেলা কোনো রাসায়নিক বর্জ্য খাওয়ার পরে এ তিমির মৃত্যু হতে পারে। তাই মৃত তিমিটিও মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে পৃথক দুটি বিশাল তিমি এভাবে ভেসে এসেছিল। দীর্ঘদিন পর আবার বিশাল মৃত তিমি সৈকতে ভেসে এসেছে।’
মেরিন লাইফ বিশেষজ্ঞ জহিরুল ইসলাম জানান, আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী এ তিমিটি হয়তো ৫/৬ দিন আগে মারা গেছে। ৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ২৬ ফুট ডায়া এ তিমিটি আনুমানিক পাচ টন ওজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, সৈকতে ভেসে আসা নীল তিমিটি ব্রাইট হোয়েল জাতীয় তিমি। পুরুষ জাতের এই তিমি প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বঙ্গপোসাগরে এদের বিচরণ দেখা যায়।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। তারা করণীয় ঠিক করছেন। রামু উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলকারনাইন জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য তিমির কিছু অংশ চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে কি কারণে এবং কতদিন আগে এই তিমি মারা গেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ মৃত তিমি পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি তিমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাগরে লক্ষ প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু প্রাণী মারা যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবু কোন কারণে তিমিটি মারা গেছে, তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিনাল পারভেজ আরও বলেন, ‘রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবে যাতে সাগরে ভেসে না যায় বা কুকুর শিয়াল এটা নিয়ে টানাটানি না করে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। সেই সঙ্গে ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ নিয়ে দ্রুত পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।’
–খুলনাঞ্চল রির্পোট