ভারতীয় বাহিনীর ঘুম কেড়ে নিয়েছেন যে গেরিলা কমান্ডার

5
Spread the love

ভারতের ছত্তিসগড়ে গত শনিবারের গেরিলা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২২ সদস্য নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মাদভি হিডমা নামে এক মাওবাদী কমান্ডারের কথা বলা হচ্ছে দেশটির প্রশাসন এবং সংবাদমাধ্যমে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিশের কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, বছর পঞ্চাশেকের এই আদিবাসী কমান্ডার গত দুই দশকে প্রায় ২৭টি বড় হামলায় যুক্ত ছিলেন। এই মাদভি হিডমাকে ঘিরে ছত্তিসগড়ে অনেক জনশ্রুতিও তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁর মাথার ওপর ৪০ লক্ষ রুপির ইনাম ঘোষিত হয়েছে। তবে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে তাঁর সাম্প্রতিক সময়ের কোনও ছবি পর্যন্ত নেই।

গত শুক্রবার রাতে এক মাওবাদী নেতাকে ধরার জন্য ভারতের সিআরপিএফ তাঁদের এলিট কোবরা ফোর্স, ছত্তিসগড় রাজ্য পুলিশ ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ডস এবং স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের মোট প্রায় দুই হাজার সদস্য বস্তারের গহীন জঙ্গলে একযোগে অভিযান চালিয়েছিলো। এই ব্যক্তি আর কেউ নন, পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির এক নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার মাদভি হিডমা, যিনি ‘হিডমালু’ নামেও পরিচিত। কিন্তু পরদিন দেখা গেল, হিডমালুকে ধরা তো দূরের কথা, তাঁর বাহিনীর পাতা ‘ইউ’ আকৃতির গোপন ফাঁদে ঢুকে প্রাণ হারালেন অন্তত ২২ জন জওয়ান, গুরুতর আহত হলেন আরও প্রায় ৩০ জন। ভুল গোয়েন্দা তথ্যে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে আরও একবার ফাঁসালেন মাদভি হিডমা।

মাওবাদী আন্দোলনের গবেষক বিদ্যাশঙ্কর তিওয়ারি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে মাদভি হিডমা নকশাল বিদ্রোহে যোগ দেন এবং নিজের ক্ষুরধার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সংগঠনে এগিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, হিডমা সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এতটাই নিষ্ঠুর যে কোনো অভিযানের পর নিহত পুলিশ বা সেনা সদস্যদের লাশ রক্ত নিয়ে হোলি খেলতেও দ্বিধা করেন না। ১৮০ থেকে ২৫০ জন বিশ্বাসী অনুগত নকশাল গেরিলার একটি সুরক্ষা বলয় তাকে সব সময় ঘিরে থাকে, যার মধ্যে বহু নারী সদস্যও রয়েছেন।

বিদ্যাশঙ্কর তিওয়ারি বলেন, হিডমা নাকি সব বড় হামলা চালান জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে, যখন জঙ্গলে গাছের পাতা ঝরে যায় এবং আড়াল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধিতে নজর রাখা এবং তাঁদের নিশানা করা অনেক সহজ হয়।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ সুকমা জেলার পুর্ভাতি গ্রামের আদিবাসী ছেলে মাদভি হিডমা আঠারো-উনিশ বছর বয়সেই মাওবাদীদের সংগে ভিড়ে যান। ২০০৪ সালে একটি বড়হামলায় নেতৃত্ব দিয়ে তিনি প্রথম পাদপ্রদীপে আসেন। ২০১০ সালে দান্তেওয়াড়ায় যে হামলায় ৭৬ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হন কিংবা ২০১৩ সালে ঝিরামঘাটিতে যে হামলায় ছত্তিসগড়ের প্রায় পুরো কংগ্রেস নেতৃত্বই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাতে হিডমা নিজে সামনে থেকে আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে রাজ্য পুলিশের কয়েকটি সূত্র দাবি করে থাকে।

তবে ভারতের সাবেক সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছত্তিসগড়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল শেখর দত্ত বলেন, এগুলোর অনেকটাই মিথ হলে তিনি অবাক হবেন না। তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না এগুলো কতটা সত্যি। এগুলোর অনেকটাই কিন্তু গুজবও হতে পারে। এই মানুষটির আদৌ অস্তিত্ব আছে কি না সেটা বলাও মুশকিল। ছত্তিসগড়ে পুলিশের যারা সাবেক বড়কর্তা তাঁরা কিন্তু অনেকেই এই গ্রাউন্ড রিয়েলিটিটা জানেন।

এদিকে বিবিসির স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মাওবাদী দলের পলিটব্যুরো কেন্দ্রীয় কমিটি মিলিয়ে তাঁর চেয়েও প্রভাবশালী ৩০/৪০ জন নেতা কিন্তু আছেন। এমন কী, এখন যিনি সাধারণ সম্পাদক, সেই বাসবরাজু নিজেও এক সময় মিলিটারি শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি আজও গেরিলাদের সঙ্গে ঘোরেন, নিজে অভিযানে সামিল হন বলে আমরা খবর পাই। কিন্তু মিডিয়া কোনওভাবে এক মাদভি হিডমার নাম জেনে গেছে বলে তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতি। শনিবার বিজাপুর সুকমা জেলার সীমান্তবর্তী যে জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনী মাওবাদীদের বন্দুকযুদ্ধ  হয়েছিলো সেটা মাডভি হিডমার নিজের গ্রাম থেকে মাত্র পাঁচ ছয় কিলোমিটার দূরে। অনেকে ধারণা করছেন, এই কারণেই এই হামলার সংগে তাঁর নাম এভাবে জড়িয়ে গেছে।

খুলনাঞ্চল ডেস্ক