নিষেধাজ্ঞার একদিন পরই ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে কিছুই জানে না গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
কীভাবে, কোন নিয়ম মেনে পরিবহন চলবে, স্বাস্থ্যবিধিই বা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং ভাড়া কোন নিয়মে চলবে জানতে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তার সংগে যোগাযোগ করা হয়। তবে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গণপরিবহন কীভাবে চলবে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র পরিচালক (এডমিন) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গাড়ি চলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। বিআরটিএ এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
একই বিষয়ে জানতে সংস্থাটির পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সারোয়ার আলমের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনিও দেন একই জবাব। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে গাড়ি বন্ধ করা বা চালানো কোনোটার সিদ্ধান্তই আমরা নেইনি। এ বিষয়ে সম্ভবত মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে খোঁজ নিতে পারেন।
যে সংস্থা গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করবে তারাই জানে না নিষেধাজ্ঞার সময়ে কীভাবে গণপরিহন চলবে। এর প্রভাব কেমন হতে পারে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহন নিয়ে এক রকম ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। আজকের সিদ্ধান্তই প্রমাণ করছে এখানে চরম সমন্বয়হীনতা চলছে। কিন্তু এই সমন্বয়হীনতার জন্য আমাদের কঠিন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বাস বন্ধ করার আগে যেমন কোনো পরিকল্পনা হয়নি, চালুর সময়ও কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে দেখছি না। অথচ এই কঠিন মুহূর্তে গাড়ি চালাতে হলেও একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার ছিলো। এসব বাহনে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিংয়ের জন্য একটি শক্ত কমিটি গঠন করা দরকার ছিলো। অথচ সেখানে বিআরটিএ জানেই না। এটা করোনাকে ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
এ সিদ্ধান্ত সরকার না পরিবহন মালিকদের এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিভার্সাল মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ডা. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, সরকার লকডাউন যে দিয়েছে এটা জান বাঁচানোর জন্য করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। জান বাঁচানোর জন্য করলে প্রতিদিন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতো না। মানুষের জান বাঁচানোর চেয়ে কতিপয় মানুষকে খুশি করাই তাদের মূল কাজ মনে হচ্ছে। এগুলো একেকটা অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। এগুলোই বরারর ক্ষতির মাত্রা বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, লকডাউন দেওয়া মানেই বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি। জাতিকে বড় ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সরকার এইটুকু ক্ষতি মেনে নিয়েই লকডাউন দিয়েছে। এখন আবার কারো কারো প্রতি মায়া দেখানোর কোনো মানে হয় না। সরকার একের পর এক অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেই করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী সোমবার ভোর থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একদিন না যেতেই মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নগরীগুলোতে গণপরিবহন চালু রাখার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
– কেফায়েত শাকিল