ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিথ্যাচার করে চলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রোববার হুগলিতে তৃণমূলের নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, মোদি ও অমিত শাহ বাংলায় এসে শুধু মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। তারা ছয় বছর দিল্লিতে ক্ষমতায় আছেন, কী করেছেন বাংলার জন্য? আগে দিল্লি সামলান। প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। সেখানেও দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়ে এসেছেন।
রোববার হুগলির জনসভায় মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে আর কিছু বলেননি মমতা। তবে শনিবারও নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেছিলেন, বাংলাদেশে গুন্ডা আনতে গিয়েছিলেন মোদি। অবশ্য এর আগেও কয়েকটি জনসভায় মোদির বাংলাদেশে ওড়াকান্দি ও যশোরেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন মমতা। শনিবার পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদিও তার এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। মোদি বলেছেন, মন্দিরে পূজা দিলে দিদি খেপে যান কেন?
প্রধানমন্ত্রী মোদি শনিবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী জনসভায় মমতা ও তৃণমূলের হার নিশ্চিত বলে মন্তব্য করে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের নতুন সরকারের জন্য কাজ শুরুর আহ্বান জানান। মোদির ওই বক্তব্যকে রোববার শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন মমতা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে ওই কথা বলতে পারেন? এরপর তিনি ভোট কারচুপির আশঙ্কা ব্যক্ত করে নেতাকর্মীদের ভোট গ্রহণ করা ইভিএম মেশিন পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে নন্দীগ্রামে ভোট নিয়ে মমতার কারচুপির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোববার এক চিঠিতে কমিশন বলেছে, নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে মমতার অভিযোগ ‘তথ্যগতভাবে ভুল’।
১ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ হয় ‘হট সিট’ নন্দীগ্রামে। এ আসনে এবার লড়াই করেছেন মমতা ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে মমতা নিজে হাতে চিঠি লিখে কমিশনকে পাঠিয়েছিলেন। মমতার সেই অভিযোগের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। সেইসঙ্গে বয়ালের বুথে তৃণমূল নেত্রীর আচার-আচরণ নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে কমিশন বলেছে, ওই ঘটনায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্য রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত হতে পারত। আচরণবিধি ও জনপ্রতিনিধি আইনে এ ব্যাপারে দ্রুত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য খতিয়ে দেখছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, বয়ালে যা ঘটেছে তা সবাই দেখেছে। ১৪৪ ধারা জারি হওয়া সত্ত্বেও মেলার মাঠের মতো ভিড় করে বিজেপির পক্ষে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। কমিশন সেটি কীভাবে অস্বীকার করতে পারে। আমরা আগেও বলেছি, কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। আবারও সেটিই করছে।
নন্দীগ্রামে ভোট প্রসঙ্গে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, ‘চূড়ান্ত অসভ্যতা হয়েছে নন্দীগ্রামে। যিনি এখানে বিজেপির প্রার্থী, তার নেতৃত্বে রাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুস্কৃতকারীরা। ভোটে চিটিংবাজি হয়েছে। আমরা ৬৩টি অভিযোগ করেছি।’
অভিষেকের বিরুদ্ধে শুভেন্দুর অভিযোগ: রোববার সংবাদ সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) কেন্দ্র করে অনেক কথোপকথন সামনে এসেছে। কয়লা এবং গরু পাচারের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ভাইপোকে পাইয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের যুবনেতা বিনয় মিশ্র এবং তার আত্মীয় তথা পুলিশ কর্মকর্তা অশোক মিশ্র।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুভেন্দুর এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, গোটা বিষয়টি সাজানো চিত্রনাট্য।
–খুলনাঞ্চল ডেস্ক