করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফেরার চিন্তা করছে বিএনপি। বিশেষ করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মামলা, গ্রেপ্তার নির্যাতনের ঘটনায় বড় ধরনের কর্মসূচিতে না গিয়ে মানববন্ধন, অনশন করার কথা ভাবা হচ্ছে। আগামী রমজানের আগ পর্যন্ত এভাবে চলতে চায় দলটি। সে ক্ষেত্রে পুরো রমজান মাস কমিটি গঠন সংক্রান্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে চাইছেন নেতারা। এ সময় মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।– খবর আমাদের সময়
গত বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটে এ রকম রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনাকে কর্তৃত্ববাদী সরকারবিরোধী দলকে দমন করতে একটা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার সুযোগ নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারবিরোধী দলকে দমন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, আমরা সরকারের এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছি। হেফাজতের কর্মসূচির পর সারা দেশে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঢাকায় দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেপ্তারে সরকারের উদ্দেশ্য দুটি। এক হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানো হেফাজত একটি মৌলবাদী সংগঠন। এ সংগঠনকে দমন করতে শেখ হাসিনা সরকারের বিকল্প নেই। বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আরেকটি হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও নেতাকর্মীদের আন্দোলনমুখী করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা বাধাগ্রস্ত করা। বিষয়টি বুঝতে পেরে গত বুধবার স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে করোনা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে আপাতত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকা- স্থগিত করে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, গতকাল শুক্রবার হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। বিএনপিকে যাতে সরকার হেফাজতের কর্মকান্ডের সঙ্গে কোনোভাবে জড়াতে না পারে সে জন্যই গত বুধবার সব ধরনের কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা ডা. একেএম আজিজুল হকসহ দেশব্যাপী দলের শতাধিক নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত। করোনায় এ পর্যন্ত বিএনপির ৪৪০ নেতাকর্মী মারা গেছেন।
গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, আমরা রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত রাখলেও সরকার তো আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করতে ছাড় দিচ্ছে না। তা হলে আমরা শুধু ঘরে থেকে মার খাব কেন? খোঁজ নিয়ে দেখেন গত কয়েকদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কত মামলা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের কর্মসূচি দিতেই হবে।
-বিশেষ প্রতিনিধি