সংকুচিত হয়ে পড়ছে রূপালী পর্দার বিনোদন

54
Spread the love

ভালো সিনেমা না থাকায় হলে দর্শক সংখ্যা কমছে। কমছে শিল্পের প্রতি হল মালিকদের আগ্রহও। ফলে একে একে বন্ধ হচ্ছে এক সময়ের দর্শকমুখর সিনেমা হলগুলো। দু-একটা সিনেমা হল চালু থাকলেও গুটিকয়েক দর্শক নিয়ে শো চলায় লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের।

এক সময় খুলনার ২০টি সিনেমা হলে হাজার হাজার দর্শক আসতেন বিনোদনের জন্য। সময়ের পরিক্রমায় ১৭টি হলের কোনো অস্তিত্ব নেই। বাকি তিনটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ফলে খুলনায় দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে রূপালি পর্দার বিনোদন।

জানা যায়, স্বাধীনতার আগে পরে খুলনা মহানগরী এবং বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ২০টি সিনেমা হল গড়ে ওঠে। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে শঙ্খ, পিকচার প্যালেস, সোসাইটি, উল্লাসিনী, সঙ্গীতা, স্টার, ঝিনুক; খালিশপুরে চিত্রালী, লিবার্টি সিনেপ্লেক্স, বৈকালী; দৌলতপুরের মীনাক্ষী; ফুলবাড়িগেট এলাকার জনতা, গ্যারিসন; ডুমুরিয়ায় শঙ্গমহল; চুগনাগরের হিরামণ; দিঘলিয়া সেনহাটির রূপসা; ফুলতলার শাপলা; রূপসার রূপসাগর; পাইকগাছার বাসুরী কপিলমুনির সোহাগ হল বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এসব সিনেমা হলের মধ্যে চিত্রালী, লিবার্টি সিনেপ্লেক্স সঙ্গীতা টিকে থাকলেও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

পিকচার প্যালেস হলের এক সময়ের নিয়মিত দর্শক মো. রউফুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখন আর দেবদাস, বেদের মেয়ে জোসনা লাইলি মজনুর মতো ছবি নেই, নেই রাজ্জাক, কবরী, আনোয়ার হোসেন, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাবানা, ববিতার মতো অভিনেতা। ফলে ভালো সিনেমা হয় না, দর্শকও হয় না।’

তিনি বলেন, পিকচার প্যালেসে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ দেখার সময় এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। জন্ম দেয়া কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয়েছিল জোসনা। এক বছর ধরে সেই সিনেমা এই হলে চলে। কিন্তু এখন এসব অতীত।’

ফেরি করে কাঁচামাল বিক্রি করা জমির উদ্দিন বলেন, ‘মানসম্মত ছবি না হওয়ায় হল দর্শকশূন্য হয় পড়েছে। লোকসানের ঘানি থেকে মুক্তি পেতে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়ে একের পর এক হল বন্ধ করছে।’

চিত্রালীর পরিচালক তপু খান বলেন, ‘মানসম্মত ছবি না পাওয়া, সিন্ডিকেট, বাজে ছবির কারণে দর্শক কমেছে। করোনার কারণে বন্ধ ছিল সিনেমা হলগুলো। তখন ৮-১০ জন কর্মচারী নিয়ে টিকে থাকা দায় ছিল। পরে চালু হলেও একটি মাত্র নতুন ছবি ‘বিশ্ব সুন্দরী’ ছাড়া আর কোনো ছবি আসেনি। সেখানেও দর্শক স্বল্পতা। সিনেমা হলের ধারণক্ষমতা ১১০০ কিন্তু এখন ১১ জন দর্শক খুঁজে পাওয়ায় দায়। তবুও ভালো ছবির আশায় রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি একটু সহযোগিতা করে এবং নির্মাতারা যদি আগের মানের ছবি তৈরি করতে পারে তাহলে রূপালি পর্দা আগের অবস্থানে ফিরবে। হলগুলো সরকারি অনুদানে আধুনিকায়ন করা হবে শুনেছি। সেই অনুযায়ী অডিটও হয়েছে। তবে অগ্রগতি নেই।’

লিবার্টি সিনেপ্লেক্সের মালিক মো. শাহাজাহান আলী বলেন, ‘হলে দর্শক এখন শূন্যের কোঠায়। যে কারণে হল বন্ধ হয়ে গেছে। আমি নিজেও সঙ্গীতা হল ছেড়ে দিয়েছি। এখন অন্যজন চালাচ্ছে। অনেকের মতো পেশা পরিবর্তন করে এখন ঠিকাদারি করছি।’

নগরীর ‘সঙ্গীতা’ ও ‘শঙ্ক’ সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা শামীম, নুর ইসলাম মোক্তার হোসেন জানান, এক সময় হলে প্রচুর দর্শক সমাগম হতো। কিন্তু অশ্লীলতার করণে হলে দর্শক নেই। বাসায় বসে নানা মাধ্যমে নতুন ছবি দেখা যায়। কারণে হলে এখন আর দর্শক আসতে চান না।

শঙ্ক হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন রাজু বলেন, ‘ডিশ লাইন, ভিডিও পাইরেসি, অশ্লীল ছবির প্রভাব মানসম্মতভাবে নির্মাণ না হওয়ায় দর্শকরা হল থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। দর্শক না থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছেন মালিকরা। ফলে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে তারা বাধ্য হচ্ছেন।’

পিকচার প্যালেসের ম্যানেজার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘হলে দর্শক না আসায় আয় থেকে ব্যয় বেড়েছে। লোকসানের কারণে হল বন্ধ করতে হচ্ছে।’

-স্টাফ রিপোর্টার