ঘরে বসে করোনার মৃদু ও মাঝারি মাত্রার সংক্রমণের চিকিৎসা

1
Spread the love

দেশে বেড়ে গেছে করোনার প্রাদুর্ভাব। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত মৃতের হার। হাসপাতালে প্রচণ্ড ভিড়। খালি নেই আইসিইউ বেড।

এই অবস্থায় ঘরে বসে প্রাথমিক চিকিৎসা সারা প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে। করোনা মূলত সংক্রমণের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। যেমন  মৃদু (Mild), মাঝারী (Moderate), তীব্র (Severe) সংকটাপন্ন ( Critical) হয়ে থাকে। চার ভাগে ভাগ করে করোনার উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা করানো যেতে পারে। এর মধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি  মাত্রার রোগীদের বাসায় চিকিৎসা দেয়া যায়।এক্ষেত্রে রোগের মাত্রা বুঝার জন্য বাসায় রোগীর জ্বর অক্সিজেনের মাত্রা মাপার  জন্য  একটি থার্মোমিটার একটি পোর্টেবল পালস অক্সিমিটার নিজ সংগ্রহে রাখা জরুরি।

করোনার মুদু সংক্রমণের চিকিৎসা:

মুদৃ লক্ষণ হিসেবে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, স্বাদ/গন্ধ না পাওয়া, কখন কখন পাতলা পায়খানা অথবা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা। এক্ষেত্রে নিচের নিয়মে গ্রহণ করা যায়-

(১) Tab. Ivermactine (06 mg) টি ট্যাবলেট (সর্বমোট ১৮ মিগ্রাঃ) প্রথম দিন এক সাথে এক বারেই খালি পেটে খেতে হবে। এরপর আর খেতে হবে না। ১০ বছর এর অধিক বয়সী সবাই এই ডোজে ঔষধটি খেতে পারেন। এক বছরের বেশী বয়সী বাচ্চাদের Tab. Ivermactine ০.১৫-০.২০ মিগ্রাঃ/কেজি ওজন হিসাবে  মাত্র একবার খাওয়াতে  হবে।

(২) Cap. Doxycycline  100 mg  প্রতিদিন টি ক্যাপসুল দৈনিক বার করে মোট দিনে ১০ টি ক্যাপসুল  খেতে হবে। খালি পেটে খেলে ভাল হয়। ১০ বছর থেকে শুরু করে এই ডোজেই ঔষধটি সবাই খেতে পারেন। ১০ বছরের চেয়ে ছোট বাচ্চাদের Cap. Doxycycline  পরিবর্তে  Cap Azythromycin 250 mg দিনে একবার করে দিন অথবা ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে Syrp.  Azythromycin 10 mg/kg ওজন হিসাব করে দিনে একবার করে দিন খাওয়ানো যায়।

করোনার মাঝারি মাত্রার সংক্রমণের চিকিৎসা:

এক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত মৃদু মাত্রার সংক্রমণ এর সঙ্গে যদি অক্সিজেনের ঘাটতিজনিত শ্বাসকষ্ট (অক্সিজেন সেচুরেশন ৯৪% এর নীচে হলে) যোগ হয়, তখন বুঝতে হবে করোনার মৃদু মাত্রা থেকে মাঝারি মাত্রার সংক্রমণে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে নিম্নের চিকিৎসা শুরু করতে হবে-

অনতিবিলম্বে  হাসপাতালে ভর্তি সহচিকিৎসক এর শরণাপন্ন হতে হবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি হাসপাতালে ভর্তি বিলম্বিত হয় তবে করোনা যাতে তীব্র  সংকটাপন্ন সংক্রমণে পরিণত না হয়, তার জন্য নিচের চিকিৎসা ধারাবাহিক ভাবে চালিয়ে যেতে হবে-

(১) Tab. Ivermactin মিঃগ্রাঃ এর টি ট্যাবলেট দিনে একবার করে রোগের সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী:

মাঝারি সংক্রমণে দিন

তীব্র সংক্রমণে দিন

সংকটাপন্ন সংক্রমণে দিন পর্যন্ত নিরাপদে খাওয়ানো যেতে পারে।

(২) Tab. Dexamethasone 0.5 mg (Dexonex)

৪+৪+৪ x ০৫ দিন,

২+২+২  x ০৩ দিন

১+১+১ x ০৩ দিন,  তারপর বন্ধ।

অথবা

Tab. Methylprednisolone 08 mg (Methigic 8/ Methipred 8) এটি খেতে হবে-

২+০+১ x ০৫ দিন

১+০+১ x ০৩ দিন

১+০+০ x ০৩ দিন, তারপর বন্ধ।

(৩) Tab. Rivaroxaban 10 mg ( RivaXa 10 / Rivaban 10)  প্রতিদিন টি ট্যাবলেট ভরা পেটে খেতে হবে x মাস

(৪) সঙ্গে যদি জ্বর থাকে, তবে অতিরিক্ত-

Tab. Azithromycin 500 mg (Zimax 500/ Azithrocin 500): প্রতিদিন টি ট্যাবলেট ভরা পেটে খেতে হবে x দিন।

(৫) Tab. Melatonin 06 mg ( Filfresh): রাতে করোনার কারণে ঘুমের সমস্যা হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা টায় ০১ টি ট্যাবলেট খেতে হবে।

(৬)Tab. Mucomist DT ০+১+

কাশি বেশি হলে খাবেন-

(৭) Tab. Colchicine 0.6 mg/ Colimax ১+০+হিসাবে ০৭-১০ দিন খাবেন।

(গ) ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, করোনার আক্রান্ত রোগীরা ওপরে উল্লেখিত সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ছাড়া বমি এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানার ( GI symptoms) এর উপসর্গ নিয়ে আসছেন। ধরনের কভিড-১৯ রোগীর জন্য

(১) Tab. Nitazoxanide 500 mg (Zox 500 mg) টি করে দৈনিক  বার হিসাবে দিন অথবা টি ট্যাব শুধু একবার খেতে হবে।

(২) Cap. Doxycycline  100 mg  প্রতিদিন টি ক্যাপসুল দৈনিক বার করে মোট দিনে ১০ টি ক্যাপসুল  খেতে হবে। খালি পেটে খেলে ভাল হয়।  ১০ বছর থেকে শুরু করে এই ডোজেই ঔষধটি সবাই খেতে পারেন। ১০ বছরের চেয়ে ছোট বাচ্চাদের Cap. Doxycycline  পরিবর্তে  Cap Azythromycin 250 mg দিনে একবার করে দিন অথবা ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে Syrp.  Azythromycin 10 mg/kg ওজন হিসাব করে দিনে একবার করে দিন খাওয়ানো যায়।

(১) Tab. Ivermactin ০৬ মিঃগ্রাঃ এর ০২ টি ট্যাবলেট দিনে একবার করে রোগের সংক্রমনের মাত্রা অনুযায়ীঃ

মাঝারি সংক্রমণে দিন

তীব্র সংক্রমণে দিন

সংকটাপন্ন সংক্রমণে দিন পর্যন্ত নিরাপদে খাওয়ানো যেতে পারে।

(২) Tab. Dexamethasone 0.5 mg (Dexonex)

৪+৪+৪ x ০৫ দিন,

২+২+২  x ০৩ দিন

১+১+১ x ০৩ দিন,  তারপর বন্ধ।

অথবা

Tab. Methylprednisolone 08 mg (Methigic 8/ Methipred 8)এটি খেতে হবে-

২+০+১ x ০৫ দিন

১+০+১ x ০৩ দিন

১+০+০ x ০৩ দিন, তারপর বন্ধ।

(৩) Tab. Rivaroxaban 10 mg ( RivaXa 10 / Rivaban 10)ঃ  প্রতিদিন টি ট্যাবলেট ভরা পেটে খেতে হবে x মাস

(৪) সঙ্গে যদি জ্বর থাকে, তবে অতিরিক্ত-

Tab. Azithromycin 500 mg (Zimax 500/ Azithrocin 500): প্রতিদিন টি ট্যাবলেট ভরা পেটে খেতে হবে x দিন।

(৫) Tab. Melatonin 06 mg ( Filfresh): রাতে করোনার কারণে ঘুমের সমস্যা হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা টায় ০১ টি ট্যাবলেট খেতে হবে।

(৬)Tab. Mucomist DT ০+১+

কাশি বেশি হলে খাবেন-

(৭) Tab. Colchicine 0.6 mg/ Colimax ১+০+হিসাবে ০৭-১০ দিন খাবেন।

(গ) ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, করোনার আক্রান্ত রোগীরা ওপরে উল্লেখিত সর্দিকাশি,  জ্বর, শ্বাসকষ্ট ছাড়া বমি এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানার ( GI symptoms) এর উপসর্গ নিয়ে আসছেন। ধরনের কভিড-১৯ রোগীর জন্যঃ

(১) Tab. Nitazoxanide 500 mg (Zox 500 mg) ০১ টি করে দৈনিক  ০২ বার হিসাবে ০৫ দিন অথবা ০৩ টি ট্যাব শুধু একবার খেতে হবে। ১২ বছর থেকে সবাই এই ডোজে খাবেন।

শিশুদের জন্য চিকিৎসা:

*১-বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১০০ মিগ্রা সিরাপ (০৫ মিলি) দৈনিক বার

*৪-১১ বছরের শিশুদের জন্য ২০০ মিগ্রা (১০ মিলি) দৈনিক বার খেতে হবে।

(২) Tab.  Azithromycin 500 mg (Azyth 500) দৈনিক টি করে দিন খাওয়াতে হবে।

** ১০ বছরের নীচের বাচ্চাদের জন্য ২৫০ মিগ্রা এর দৈনিক টি ট্যাবলেট খাওযাতে হবে।

** ছোট বাচ্চাদের জন্য এই ঔষধটি ১০ মিগ্রা/কেজি হিসাবে দৈনিক একবার করে দিন খাওয়াতে হবে।

(৩) সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার সেলাইন খেতে হবে।থেকে সবাই এই ডোজে খাবেন।

নীচের ওষুধগুলি সব ক্যাটাগরির করোনা রোগে (মৃদু/মাঝারি/ তীব্র /সংকটাপন্ন) অথবা করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে এমনিতেই উপসর্গ ভিত্তিক খেতে পারেন –

(১) জ্বর, গা ব্যাথা ইত্যাদির জন্য: Tab. Paracetamol: ১-টা ট্যাবলেট দিনে ২-বার যতক্ষন উপসর্গ থাকছে।

(২) এসিডিটির জন্য: Tab. Famotack 20 mg ( Famotidine) ০১ টি দিনে এক/দুই বার খাবেন।

(৩) বমি / বমি ভাব হলে: Tab. Omidon ০১ টি ট্যাবলেট দিনে ০১- ০৩ বার  খাওয়া যেতে পারে।

(৪) সর্দি/এলার্জি: Tab. Fexo 60 mg (Fexophenadine): দৈনিক ০১-০২ টি ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।

(৫) ছাড়া ভিটামিন + মিনারেল ঔষধ যোগ করা যেতে পারেঃ

*Tab. Bicozin: দৈনিক ০১ টা

*Tab. Proviten Silver : দৈনিক ০১ টা যাদের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে

*Tab. Proviten Gold: দৈনিক ০১ টা যাদের বয়স ৫০ বছরের নীচে ১৮ বছরের উপর।

*Cap. D3 20000: যাদের ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি আছে বা আছে বলে মনে করেন/বয়স্ক তারা ০১ টি ক্যাপসুল প্রতি সপ্তাহে বা ০১ সপ্তাহ পর পর খেতে পারেন।

*Tab. Vit-C: ০১ টি দৈনিক ০২ বার। তবে প্রতিদিনের খাবারে লেবু বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে এটার দরকার হবে না।

(৬) Tab. Melatonin 06 mg ( Filfresh) : রাতে কভিডের কারনে ঘুমের সমস্যা হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা ০৬০০ টায় ০১ টি ট্যাবলেট খেতে হবে।

শ্বাসতন্ত্রের যত্ন

*উপুর হয়ে শোয়া, নিদেন পক্ষে উপুর হতে না পারলে পাশ ফিরে শোয়া।

* ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা (Diaphragmatic breathing, purse lip breathing, self breathing.. ইউটিউবে দেখে শেখা যেতে পারে)

* দিনে ২-বার নিঃশ্বাসে গরম পানির ভাপ নেয়া

* দিনে অন্তত ২/কাপ গরম মসলা চা খাওয়া

* দিনে একবার নাকে কালিজিরা ভিজানো পানির ড্রপ নেয়া,

* কালিজিরা, রসুন, মধু, জমজমের পানি ইত্যাদি খাওয়া।

* প্রার্থনা/মেডিটেশন এর মাধ্যমে নিজেকে দুঃচিন্তা মুক্ত রাখা।

(ঙ)  স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য অথবা যারা কভিড-১৯ রোগীর বেশী  সংস্পর্শে থাকার ঝুঁকিতে আছেন তারা কোভিড এর প্রতিষেধক/ প্রতিরোধক ঔষধ সেবন করতে পারেনঃ

(১) Tab. Ivermectin 12 mg

প্রতিটি ডোজ ১২ মিগ্রাঃ হিসাবে ঔষধ খাওয়া শুরু করবেন। এতে যেদিন ১ম ডোজ খাবে তার দিন পর ২য় ডোজ তারপর আবারো ২৩ দিন পর ৩য় ডোজ ঔষধ খাবেন (অর্থাৎ প্রথম মাসে ১ম, ৭ম ৩০ তম দিনে ঔষধ খাবেন)এইভাবে ৩০ দিনের ভিতর তিনটি ডোজ ঔষধ খাবেন।

(২) তার পর প্রতি ৩০ দিন পর পর বা প্রতিমাসে  একবার করে Tab. Ivermectin 12 mg এর একটি করে ঔষুধের ডোজ খেতে হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ মজুমদার,

উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ ( ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন), সিনিয়র ইন্টেন্সিভিস্ট বিভাগীয় প্রধান, ক্রিটিকাল কেয়ার সেন্টার এবং ইমার্জেন্সি-ক্যাজুয়ালটি সেন্টার, সি এম এইচ, ঢাকা সেনানিবাস।

(সৌজন্যে চ্যানেল আই)