গোপালগঞ্জে ভাসমান বেডে পরীক্ষামূলক পেঁয়াজ চাষে সাফল্য এসেছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নকড়ীরচর গ্রামের বর্ণির বাওরে ১২টি ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষের জন্য কৃষককে আর্থিক সহায়তা, বীজ ও পরামর্শ দেয় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস।
ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষে দেশে প্রথমবারের মত এই সফলতা এসেছে বলে জানান গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ।
তিনি বলেন, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষে সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে এসেছে আধুনিক পদ্ধতি। আগে ভাসমান বেডের ওপর লতাবিহীন বিভিন্ন শাক ও সবজি উৎপাদন করা হত। বর্তমানে লাউ, কুমড়া, ঢেড়স, করলার পাশাপাশি উৎপাদন হচ্ছে মাসলা জাতীয় ফসল হলুদ ও আদা। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষ। ভাসমান বেডে সবজি ও মশলা চাষ গবেষণা সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাসের পারমর্শে ভাসমান বেডে প্রথম পরীক্ষামূলক পেঁয়াজ চাষ করা হয়। ভাসমান বেডে সাধারণত পেঁয়াজ ভাল হয় না। কিন্তু গোপালগঞ্জে ভাসমান বেডে পরীক্ষামূলক পেঁয়াজ চাষ সফল হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১১ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।
সদর উপজেলার নকড়ীরচর গ্রামের কৃষক হানিফ মল্লিক বলেন, উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অফিসের অর্থায়ণে ও পরামর্শে এ বছর পেঁয়াজ চাষ করি। বীজতলায় তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজের চারা তৈরি করি। তারপর এ চারা ১২টি বেডে রোপন করি। প্রতিটি ১০ বর্গমিটারের বেডে ২২ কেজি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। সে হিসাবে হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ১১ টন। আন্তঃফসল হিসেবে বেডে মরিচ ও লালশাক আবাদ করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বেড তৈরি ও বীজের জন্য ১২০০ টাকা খরচ হয়েছে। এতে কোন সার বা কীটনাশক লাগেনি। প্রতিটি বেড থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ, মরিচ ও লাল শাক বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। ভাসমান বেডে লাভজনক পেঁয়াজ চাষ দেখে আমার প্রতিবেশি কৃষকরা আগামীতে এ জাতীয় চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
নকড়ীরচর গ্রামের কৃষক ছালেম হোসেন বলেন, হানিফের ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষ দেখেছি। এটি খুবই লাভজনক। আগামীতে আমি ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষ করবো।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জিএম অলিউল ইসলাম বলেন, বর্ষা শেষে নভেম্বর মাসে যখন পানি নামতে শুরু করে তখন কচুরিপানা দিয়ে পেঁয়াজ চাষের বেড তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজের পরিবর্তে প্রতিটি বেডে পেঁয়াজের চারা রোপন করতে হয়। ৮০ থেকে ৮৫ দিনেই বেড থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করা যায়। ভাসমান বেডে পেয়াজ চাষের এ পদ্ধতি সারা দেশের জলাবদ্ধ এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামীতে দেশে পেয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পেঁয়াজের আমাদানী নির্ভরতা কমবে। কৃষক লাভবান হবেন।
– গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি