জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকরা একটি নম্বর বহন করবেন। ১০ সংখ্যার এমন একটি ইউনিক আইডি বা ইউআইডি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এটি হলে জন্ম নিবন্ধনে একটি নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে আরেকটি নম্বর বহন করতে হবে না নাগরিকদের। এজন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংগে গত বছরের ২ জানুয়ারি চুক্তি করে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। চুক্তির পর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত এ কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তাই সহসাই নাগরিকরা এ কার্ড পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউনিক আইডির বিষয়ে কথা হলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম হুমায়ূন কবীর বলেন, নির্বাচন কমিশন তো আর সবকিছু দিতে পারবে না। অনেকগুলো বিভাগের সমন্বয়ে ইউনিক আইডি হবে। এর জন্য একটি জাতীয় কমিটিই আছে। সবাই এটি নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা সবাই ইউনিক আইডি নিয়ে এখনো কাজ করছি। তাই কবে নাগাদ এটি দেওয়া হবে তা এখনি বলতে পারবো না। সব বিভাগ যখন একেবারে আপডেটেড হবে, জন্ম-মৃত্য, তারপরে বিয়ে-তালাক, স্কুলে ভর্তি, হাসপাতাল, প্রেগনেন্সি কবে হলো, এগুলো যদি রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসে, তাহলে আমরা ইউনিক আইডিতে চলে যেতে পারবো।
ইউনিক আইডি দিতে আমরা কিন্তু প্রস্তুত। ইউনিক আইডি শুরু করার জন্য বাকি বিভাগগুলো কাজ করছে। কোনো কোনো বিভাগ হয়তো তাদের কার্যক্রম আপডেটেড করে ফেলেছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ইউনিক আইডি করা হলে একজন নাগরিককে জন্ম নিবন্ধন নম্বর, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর, টিন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর- এমন অসংখ্য নম্বর সংরক্ষণ বা মনে রাখতে হবে না। ইউনিক আইডির মাধ্যমে একজন নাগরিক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি মাত্র নম্বরে চিহ্নিত হবেন। আর এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে আপাতত ১০ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ইউনিক আইডি বা ইউআইডি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জন্মের প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি নাগরিককে ইউআইডি’র আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে জন্মের পর থেকে ১৮ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে একটি ডেটাবেজের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
ইসি সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ থেকে ১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীদের তথ্য জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ থাকায় কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব হবে।
যেভাবে করা হবে ইউআইডি
ব্যক্তি যখন জন্ম নিবন্ধন অথবা এনআইডি নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধিত হবেন তখন তাকে ইউআইডি দেওয়া হবে। ইউনিক আইডি নম্বর বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ একটি শিশুর জন্মের পরপরই তাকে এই ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি দেবে। এজন্য ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের সিস্টেম এবং জন্ম নিবন্ধনের সিস্টেম দু’টি সংযুক্ত থাকবে। ইতিমধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছরের উপরে অর্থাৎ ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন তাদের ১০ ডিজিটের ইউআইডি নম্বর তৈরি করা হয়েছে।
যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ এখনো ভোটার হননি তারা যেভাবে ইউনিক আইডি পাবেন-
যেসব ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েরই এনআইডি নম্বর আছে, তাদের জন্য ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ এবং পিতা-মাতার এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ ইসিতে পাঠাতে হবে। ইসির সার্ভার পিতা-মাতার এনআইডি নম্বর যাচাইপূর্বক উক্ত ব্যক্তির জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউআইডি পাঠাবে। আর যেসব ব্যক্তির পিতা অথবা মাতার এনআইডি নম্বর আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ এবং পিতা অথবা মাতার এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ ইসির সার্ভারে পাঠালে সার্ভার পিতা অথবা মাতার এনআইডি নম্বর যাচাইপূর্বক উক্ত ব্যক্তির জন্য ইউআইডি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পাঠাবে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তির পিতা বা মাতা কারও এনআইডি নম্বর নেই, তাদের নাম, জন্ম তারিখ অথবা ভাই-বোন বা উপযুক্ত অভিভাবকের এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ ইসির সার্ভারে পাঠালে সেই এনআইডি নম্বর সার্ভারে যাচাইপূর্বক উক্ত ব্যক্তির জন্য ইউআইডি পাঠাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
– মো. হুমায়ূন কবীর