একসময় যিনি ছিলেন আশা-ভরসার জায়গা। এখন তিনিই প্রতিপক্ষ। মূলত মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজধানীতিতে এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর আজ তিনিই কি-না মমতাকে বিদায় করে দিতে চাইছেন। তাতেই নীলবাড়ির লড়াইয়ের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে নন্দীগ্রাম। তাদের সম্পর্কের এ অভিঘাতই ২৯৪ আসনের মধ্যে নন্দীগ্রামকে ‘হট সিট’ করে তুলেছে। চেনা মাটির দখল নিতে মরিয়া দু’পক্ষই। সময়ও ঘনিয়ে এসেছে; রাত পোহালেই বিধান সভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফাল ভোট।
মমতা এবং শুভেন্দু জমিরক্ষা আন্দোলনেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এক সময়। এই নন্দীগ্রাম থেকেই ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের মাটির গন্ধ ভালোই চেনা তার। সেইসঙ্গে মমতার বিরুদ্ধে লড়াই শক্তিশালী করতে এসেছেন অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের মতো বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। পাশাপাশি তৃণমূলও প্রচারে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েনি। খেলা হবে স্লোগানে মমতা টানা রয়েছেন সেখানে। বুধবার হুগলি, হাওড়ায় প্রচারে গেলেও বৃহস্পতিবার ভোটের সকাল থেকে থাকছেন নন্দীগ্রামেই। তবে তিনি নন্দীগ্রামের ভোটার নন। শুভেন্দু অবশ্য এবারই প্রথম নন্দীগ্রামে ভোট দেবেন। খবর আনন্দবাজারের
মমতা ও শুভেন্দুর মতো ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর পাশে আলোচনায় রয়েছেন নন্দীগ্রামে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও। ছাত্ররাজনীতি থেকে মূলধারার রাজনীতিতে এবারই প্রথম লড়াই মীনাক্ষীর। কিন্তু তার সাধারণ জীবনযাপন, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনিও দ্বিতীয় দফার ‘ভিআইপি’ প্রার্থীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।
নন্দীগ্রামে যেমন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মমতা নিজে লড়ছেন, তেমনি পাশের চণ্ডীপুর আসনে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে লড়াইয়ে নামিয়েছেন। আগেও ভোটে লড়েছেন সোহম। সেটা অবশ্য উপ-নির্বাচনে। ২০১৭ সালে বাঁকুড়ার বরজোড়ায় সিপিএমের সুজিত চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন সোহম। সোহমের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাজনীতিতে নবাগতা অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ভাগ্য পরীক্ষা। সদ্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এরপরই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বাঁকুড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সায়ন্তিকা। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে তৃণমূল জিতলেও গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ‘সুবিধাজনক’ জায়গায় বিজেপি।
দ্বিতীয় দফায় তারকা প্রার্থী শুধু তৃণমূলের ঘরেই নেই। অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন খড়্গপুর সদরে। ২০১৬ সালে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের জেতা ওই আসন পরে ২০১৯-এর উপ-নির্বাচনে হাতছাড়া হয় পদ্মের। দিলীপ মেদিনীপুরের সংসদ সদস্য হওয়ার পর খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হন প্রদীপ সরকার। সেখানে হিরণ কতটা সুবিধা করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদির মতো বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা তার হয়ে প্রচার করে গেছেন। এ দফায় বিজেপির আরও এক তারকা প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার অশোক ডিন্ডা। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় তাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই আসনে ইতোমধ্যে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার ডিন্ডার ওপর আক্রমণের অভিযোগও ওঠে। এর পরেই ডিন্ডাকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
এই দফায় নজরে থাকবে আরও এক আসন; ডেবরা। দুই সাবেক আইপিএস অফিসারের লড়াই সেখানে। বিজেপির ভারতী ঘোষ বনাম তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালে পদ্মশিবিরের হয়ে লড়লেও অভিনেতা দেবের কাছে পরাজিত হন ভারতী। পশ্চিমবঙ্গের আরেক ‘ভিআইপি’ রাজনীতিক সবং-এর মানস ভূঁইয়াও এ দফায় প্রার্থী। দীর্ঘ ৪০ বছর পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থেকে লড়াই করে আসছেন তিনি। কংগ্রেসের অনেকবারের বিধায়ক মানসের এ প্রথম জোড়াফুল প্রতীকে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই। ২০১৭ সালে রাজ্যসভায় তৃণমূল সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে এ আসনে জিতেছিলেন মানসের স্ত্রী গীতারানি ভূঁইয়া। অন্যদিকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল মানসকে।
-খুলনাঞ্চল ডেস্ক