১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে মধু আহরণ মৌসুম। প্রতিবছরের মতো এবছরেও একই সময় পারমিট দেয়া শুরু করবে বন অফিসগুলো। এজন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন শরণখোলার প্রায় পাঁচ হাজার মৌয়াল। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে বনে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বন অফিসের ঘাটে পারমিটের অপেক্ষা করছেন তারা। আবার এখনো নৌকা প্রস্তুতির কাজ চলছে অনেকের। সুন্দরবনসংগ্ন কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের তথ্যমতে, এবছর মৌসুমের তিন মাসে ৮০০ কুইন্টাল মধু এবং ২৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধাণ করেছে বনবিভাগ। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১এপ্রিল স্টেশন অফিসগুলো থেকে পাস-পারমিট দেয়া শুরু হবে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শরণখোলা রেঞ্জের বন থেকে ৭১১ দশমিক ৫০ কুইন্টার মধু এবং ২১৩ দশমিক ৪৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়।
মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ফুলের মধু আসে। এর পর আসে গারণ ফুলের। শেষ আসে কেওড়া ও ছইলা ফুলের মধু। এই তিন প্রজাতির মধুর মধ্যে সবচেয়ে দামী হচ্ছে খলিশার মধু। কিন্তু এবছর এ অঞ্চলে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আর বৃষ্টি না হলে ফুল শুকিয়ে ঝরে যায় বলে মধু জমে না। তাই এবছর মধু কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৌয়ালরা।
শরণখোলা স্টেশন অফিসের অপর ঘাটে কথা হয় নৌকার মালিক মৌয়াল মো. ইউনুচ হাওলাদারের (৬৫) সাথে। তিনি জানান, তার নৌকাটি প্রস্তুত করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। কাজ প্রায় শেষের পথে। ১ এপ্রিল তারা পারমিট নিয়ে বনে যাবেন। তার নৌকায় ১২জন সহযোগী রয়েছে। মৌসুমের তিন মাসে মধু আহরণ করতে গিয়ে একেকজন মৌয়ালের খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এবার বৃষ্টি নেই। তাই মধু কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, গত বছর একেকজন সহযোগী দুই মন করে মধু পেয়েছেন ভাগে। ২৫ হাজার টাকা মন দরে তা বিক্রি করেছেন।
মৌয়াল সোবাহান হাওলাদার (৬০) জানান, তার নৌকায় ১০জন মৌয়াল রয়েছেন। মৌসুমের প্রথম দিনেই (১ এপ্রিল) তারা পাস নিয়ে বনে যাবেন। তারা গহীন সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করবেন।
শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামের মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ জানান, তিনি এবছর তিনটি নৌকায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার আরো বেশি বিনিয়োগের ইচ্ছা ছিল এবার। কিন্তু বৃষ্টির না হওয়ায় তিনি বেশি বিনিয়োগে সাহস করেননি। কারণ বনে ফুলের সমারোহ বেশি থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় তা ঝরে যাচ্ছে। আর ফুল টিকে না থাকলে মধুও কম হবে।
পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সুন্দরবনে মধু কম-বেশি হওয়া অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
এসিএফ জানান, এবারে সংশ্লিষ্ট বন অফিস থেকে ১৪দিনের পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করবে মৌয়ালরা। এর মধ্যে অনুর্ধ্ব ২০০মন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈধ বি.এল.সি ধারী নৌকার মালিক হতে হবে। সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মধু আহরণ করা যাবে না এবং কোনো মৌয়াল নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা হবে।
এছাড়া, পাসধারী মৌয়ালগণ মধু আহরণের জন্য মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুন্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবে না। এগুলোসহ ৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের। এই নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে।
-শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি