অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ সময়মত দেয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকাও এ মূহুর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই। জানুয়ারি থেকে গত তিন মাসে বাংলাদেশের কেনা টিকার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসার কথা থাকলেও, স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবেই এখন পর্যন্ত সে টিকা থেকে বাংলাদেশে পেয়েছে অর্ধেকেরও কম।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে যথাসময়ে টিকা না এলে তারা ‘অন্য পরিকল্পনা’ করবেন। তবে বাস্তবতা হলো সেরাম ইন্সটিটিউট ছাড়া অন্য কোন সূত্র থেকে টিকা আনার কোনো চুক্তি বাংলাদেশের সাথে এখন পর্যন্ত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সেরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হলে করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সঙ্কটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একটি অনলাইন বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন এ কথা সত্যি সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেই। কিন্তু আমরা যখন কাজ শুরু করবো, টিকা যাতে এসে যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন টিকা নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে এবং তারা আশা করছেন চাহিদা মতো টিকা সময়মতই পেয়ে যাবেন তারা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৪২ লাখ টিকা মজুদ আছে। আর টিকা দেওয়া হয়েছে ৫৩ লাখ মানুষের। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা একদিনে দেওয়া হবে না। এরমধ্যে বিকল্প টিকা আনার বিষয়টির প্রক্রিয়া চলমান আছে। এবং এই সময়ের মধ্যেই টিকা আমদানী হয়ে আসবে। অবশ্যই ধারাবাহিকভাবেই জনগণ টিকা পাবে।
বাংলাদেশে গত ২৭শে জানুয়ারি করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরে ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় গন টিকাদান। আর টিকা আনার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো তাতে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা আনার কথা ছিলো ছয় মাসের মধ্যে। অন্যদিকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা, যার মধ্যে ৩২ লাখ ডোজই ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া।
আর বেক্সিমকো ও সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী যে তিন কোটি ডোজ আসার কথা তার মধ্যে গত ২৫শে জানুয়ারি ৫০ লাখ আর ২৩শে ফেব্রুয়ারি এসেছে ২০ লাখ ডোজ। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন, এ মাসের টিকা আমরা পাইনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে টিকার বিষয়ে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। টিকা পেতে দেরি হলে আমাদের অন্য পরিকল্পনা করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, একদিকে টিকা যথাসময়ে না পাওয়ায় এবং অন্যদিকে পাওয়া টিকা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করতে পারায় সঙ্কটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাত্র তিন মাসে ৫০ লাখ মানুষেরও দুই ডোজ টিকা প্রদান শেষ করা যায়নি, অথচ এখনই টিকার সংস্থান হুমকির মুখে।
– ঢাকা অফিস