ঠিকাদারের গড়িমসির কারণে বাঁধ ভেঙ্গে আশাশুনির দুটি গ্রাম আবার প্লাবিত

2
Spread the love
নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে শ্রীউলা ও প্রতাপনগরে ১০ স্থানে ওভার ফ্লো

উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০ স্থানে জোয়ারের পানি ওভার ফ্লো করে ভিতরে ঢুকেছে এবং ঠিকাদার কাজ শুরু করতে গড়িমসি করায় খোলপেটুয়া নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে রিং বাঁধ ভেঙ্গে আশাশুনি সদরের দুটি গ্রামে পুনরায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরের জোয়ারে পানির চাপে রিং বাঁধের ৫ টি পয়েন্টে ওভার ফ্লা ও পরে বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে ঢুকে আশাশুনি সদরের নিন্মাঞ্চল ডুবে গেছে। রাতের জোয়ারের আগে যদি বাঁধ দেওয়া সম্ভব না হয় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলকাবাসী।

গত বছর আম্পানে উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদরে পাউবো’র বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ইউনিয়ন ৩টি প্লাবিত হয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর সার্বিক উদ্যোগে কয়েকটি স্থানে ও কোন কোন এলাকায় রিং বাঁধ দিয়ে সাময়িক ভাবে এলাকাকে রক্ষার চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ ৮ মাস পর সেনা বহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের মূল বাঁধ আটকানো হলেও অজ্ঞাত কারণে বাকি থেকে যায় সদরের দয়ারঘাট গ্রামের বাঁধটি। এ বাঁধটি নিয়ে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নানাভাবে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলেও দৃশ্যমান কোন কাজ করা হয়নি। ফলে রিং বাধের উপর নির্ভরশীল এই এলাকার মানুষ মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে রিং বাধ ভেঙ্গে আবারো প্লাবিত হয়েছে। দয়ারঘাট ও আশাশুনি গ্রামের পিচের রাস্তা উপর দিয়ে দেওয়া রিং বাঁধের ৫টি পয়েন্ট ভেঙ্গে পানি ঢুকছে। পুলিন দাশ, নিরান দাশ, রনজিৎ বৈদ্যের বাড়ীর ভেতর থেকে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও মনিন্দ্র সানার বাড়ীর পাশে ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে এবং বোরো ধানের কয়েকটি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বসবাসের ঘরে পানি ঢুকছে। রাতের জোয়ারে আগে বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব না হলে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ঘঁনাস্থান পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে তারা যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান, গত বছর ২০ আগস্ট রিং বাঁধ ভেঙ্গে আবার এলাকায় পানি ঢুকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর তাকে শ্রমিক লাগিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছিল। তিনি প্রায় ১০ মে.টনের মত কাজ করিয়ে রাস্তাটি টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু বরাদ্দের চাউল আজও তিনি পাননি। তিনি বলেন প্রত্যেক গোণে বাঁধটি মেরামত করতে সরকারিভাবে বরাদ্দের কথা বলা হলেও আসলে কিছু দেওয়া হয়না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে তাদের দায় এড়িয়ে চলে যান। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে আর কত কাজ করবে। ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার বরাদ্দ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গত গোণ থেকে যদি মুলবাঁধের কাজ করতেন তাহলে আবার ভাঙ্গতো না। তারা মালামাল নিয়ে এসে কাজে গড়িমসি করছেন। সমস্ত রিং বাঁধ চুঁইয়ে পানি ভিতরে ঢুকছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও গোলাম রাব্বী জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে মুলবাঁধে। তার আগে আমাদের রিং বাঁধটি সংরক্ষন করা জরুরী। আমরা প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ দিয়েছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আসতে রওয়ানা হয়েছেন। এলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, পাউবো’র উপর ভরসা না করে আমরা এলাকাকে রক্ষার জন্য রিং বাঁধের ব্যবস্থা করে ছিলাম। দীর্ঘ এক বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও আশাশুনি সদরকে রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষ উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে এষানকার মানুষ আবারো প্লাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথে আমি ও এসি (ল্যান্ড) সেখানে গিয়েছি। বিষয়টি ডিসি স্যারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা বাঁধ আটকানোর কাজ শুরু করেছি ।

এদিকে নদীর প্রবল জোয়ারে পানিতে প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিশখালী, কুড়িকাহুনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনিয়নের নাসিমাবাদের ৫পি পয়েণ্টে, খাজরার ৭ নং ওয়ার্ড ও গদাইপুর, আশাশুনি সদরের মানিকখালী গ্রামে রিং ও মুলবাঁধ ভেঙ্গে পানি ভেতরে ঢুকেছে। মানিকখালী ব্রীজ এলাকা হতে বামনডাঙ্গা গামী ওয়াপদা বাঁধের অসংখ্যস্থানে ওভার ফ্লো’র ঘঁনা ঘটেছে। তবে বড় ধরনের কোন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা সেসব বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন। আশাশুনি সদরের বাজারে মরিচ্চাপ নদীর তীরে কোন দৃশ্যত বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি বিভিন্ন দোকানঘরের ভেতর দিয়ে ঢুকে আশাশুনি হাইস্কুল সড়ক ও থানা পুকুর প্লাবিত হয়েছে।

আশাশুনি প্রতিনিধি/খুলনাঞ্চল