টাঙ্গাইল জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খন্দকার রেদওয়ানা ইসলাম ইলুকে (৩০) শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালের একটি ভিআইপি কেবিনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে তার ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী মো. মিজানুর রহমান মিজান (৪৫) পলাতক রয়েছেন।
রেদওয়ানার মামী খোদেজা বেগম জানায়, ইলু রংপুরের রোমানতলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার স্বামী মিজুনুর রহমান মিজান সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ, কুমুদিনী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে রেদওয়ানা ইসলাম টাঙ্গাইলে বদলি হয়ে আসেন। তার স্বামী সম্প্রতি ভোলায় বদলি হয়ে যান। স্বামী-স্ত্রী দুজন জেলা প্রশাসনের কোয়ার্টারে থাকতেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধও ছিল। গত সোমবার সকালে প্রসবব্যথা নিয়ে রেদওয়ানা ইসলাম কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি হন। সকাল ১০টায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি একটি মেয়েশিশু জন্ম দেন।
শুক্রবার হাসপাতাল থেকে খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে তার মেয়ে কিছুটা অসুস্থ থাকায় তিনি ছুটি না নিয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ১১ নম্বর কেবিনে (নতুন কেবিন) থেকে যান। আর শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের তিনতলায় থাকা ইনকিউবেটরে রাখা হয়। শিশুটিকে দেখভালের জন্য রেদওয়ানার সঙ্গে ছিলেন তার মামী খোদেজা বেগম।
শনিবার দুপুরে রেদওয়ানার স্বামী মিজান কুমুদিনী হাসপাতালে স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে দেখতে আসেন। বেলা দুইটার দিকে শিশুটিকে মায়ের বুকের দুধ খাইয়ে পুনরায় তিনতলায় নিয়ে যান তার মামী খোদেজা বেগম। কিন্তু ফিরে এসে খোদেজা বেগম রেদওয়ানার কেবিনের দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পান। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কেউ দরজা না খোলায় কর্তব্যরত নার্সকে তিনি বিষয়টি জানান। পরে এক নার্স কেবিনটির দরজা অতিরিক্ত চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকে মরদেহ দেখতে পান।
এ ঘটনার খবর পেয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) দীপংকর ঘোষ, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভুমি) মীর্জা মো. জুবায়ের হোসেন,টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর, মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রিজাউল হক শেখী দিপু, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন, কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক পা. প্রদীপ কুমার রায় ও এজিএম (অপারেশন) অনিমেশ কুমার ভৌমিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে কুমুদিনী হাসপাতালের এজিএম (অপারেশন) অনিমেশ ভৌমিক লিটন বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিটি ওয়ার্ডে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রসুতি ইলুর স্বামী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর দরজা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘জেলা কালচারাল কর্মকর্তার হত্যার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে জেলা পর্যায়ে মীমাংসার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্ত হাসপাতালে এসে স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না। তার পাঁচ দিনের শিশু কন্যা রয়েছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার দীপঙ্কর কুমার ঘোষ জানান, রেদওয়ানার গলায় ওড়না দিয়ে প্যাঁচানোর দাগ দেখতে পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। নিহতের স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।